নগরজীবন

অভিযোগে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছে ওয়াসা

গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তা সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসাকে গ্রাহকবান্ধব করার লক্ষ্যে ১৬১৬২ হটলাইন নম্বর স্থাপন করে সার্বক্ষণিক অভিযোগ ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রাহকের দোরগোড়ায় জনসেবা পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি।

এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে সম্পূর্ণ বিল প্রদান ব্যবস্থাকে অটোমেশনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে। গ্রাহকবান্ধব অনলাইন বিলিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসেই তার ওয়াসা-বিলের হালনাগাদ তথ্য এখন জানতে পারছেন। বর্তমানে অ্যাপ ব্যবহার করে যেকোনো পেমেন্ট গেটওয়ে বা অনলাইন কার্ডের মাধ্যমে বিল প্রদানে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে, এতে জনগণের ভোগান্তি কমানোর সাথে স্বচ্ছতাও আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে ওয়াসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ২০০৯ সালের প্রথম দিকে পরিচালন ব্যয়ের অনুপাত বা অপারেটিং রেশিও ছিল ০.৯০। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ০.৬৬ হয়েছে। ঢাকা শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন পানির পাম্প কম্পাউন্ডে জনবান্ধব এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে এবং বিভিন্ন মহলে এর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলে দাবি ওয়াসার।

প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই নগরীর বড় রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলি জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর একটু ভারী বর্ষণে প্রতি বছরই ছন্দপতন হয় রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বর্ষা মানেই রাজধানীবাসীর কাছে জলাবদ্ধতা একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার নাম। এসব কারণে বিভিন্ন সময় ঢাকা ওয়াসার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নগরবাসী। যদিও নাগরিক এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে ওয়াসা। রাজধানীর পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য গড়ে তোলা হয় ঢাকা ওয়াসা। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য নগরীর খাল ও ড্রেনগুলোর দায়িত্ব দেয়া হয় এই সংস্থাকে।

সেই দায়িত্ব থেকে তারা কাজ করলেও মূলত রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকা, ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাগুলো। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারী বৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ধারণ করার জন্য শহরে উপযুক্ত জলাধার নেই। আর ভারী বৃষ্টির পানি টেনে নেয়ার ক্ষমতাও পাম্পগুলোর সীমিত। তবুও জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা।

জানা গেছে, ঢাকার ১৫টি খালের ২০ কিলোমিটার ও ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করেছে ঢাকা ওয়াসা। এছাড়া চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি অপসারণ পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ১৬টি খাল উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, দারুস সালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, বিমানবন্দর এলাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শঙ্কর, ঝিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাই এই প্রকল্পের প্রধান কাজ। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা এ কাজের অংশ ছিল।

ওয়াসা সূত্র জানায়, স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন ৩০০ কিলোমিটারের পরিষ্কারের কাজ চলছে তাদের। ২৪৯ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কারের কাজ অগ্রগতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হলে চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হবে। বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে যেন জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য গত বছর থেকে ১৭টি খালের ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করছে তারা। পানি যেন দ্রুত ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে এ জন্য ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার পাইপ পরিষ্কারের কাজ চলছে। রাস্তার পানি যেন দ্রুত পাইপ ড্রেনে প্রবেশ করতে পারে এ জন্য ৭০০টি ক্যাচপিট পুনর্নির্মাণ ইতোমধ্যে তারা করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন জানান, রাজধানীতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কাজগুলো শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে আসবে।

অন্যদিকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে ই-সেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে ই-বিলিং, ই-জিপি, ই-পানি ও পয়ঃসংযোগ, ই-নথি, ই-রিক্রুটমেন্টসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করতে ঢাকা ওয়াসা সক্ষম হয়েছে। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে ঢাকা ওয়াসার।

এছাড়া পানির পাম্পে এসসিএডিএ স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসার পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে ইন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং বাস্তবায়নের পদেক্ষপ গ্রহণ করেছে ওয়াসা। আইওটি ও জিআইএস ব্যবহার করে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রক্রিয়া চলমান আছে। এর মাধ্যমে সমস্ত মিটার, ভাল্বসহ অন্যান্য সব ডিজিটালাইজেশন সম্পন হবে।

পানি সরবরাহের বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে ২০০৯ সালের পরে এই প্রথম ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার তুলনায় বেশি হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে দৈনিক ২১২ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১৮৮ কোটি লিটার, সেখানে ২০১৯ সালের দিকে এসে ঢাকা ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে ২৬৫ কোটি লিটার। বর্তমানে দৈনিক চাহিদা ২৪০-২৫০ কোটি লিটার। যা বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা ওয়াসার ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং যুগান্তকারী অগ্রগতি।

সংস্থাটির দাবি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ম্যানিলা, ঢাকা ওয়াসার সফল ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘ঢাকা ওয়াসা সার্ভিসেস টার্ন এরাউন্ড’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। এডিবি ঢাকা ওয়াসাকে ‘ওয়ান অফ সাইথ এশিয়াস বেস্ট পাবলিক ওয়াটার ইউটিলিটিস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ওয়াসা একটি সেবামূলক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যা ওয়াসা অ্যাক্ট ১৯৯৬ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ সেবাদান কাজের দায়িত্ত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত। এছাড়া অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আংশিক দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসা পালন করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =

Back to top button