অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
এশিয়ার দুইটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম চলতি ২০২১ সালে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তালিকায় থাকবে বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইআইএফ।
এশিয়া মহাদেশে সম্মুখসারির অর্থনীতিসমূহের মূল ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করে সম্প্রতি এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
এশিয়ার ছয়টি ফ্রন্টিয়ার মার্কেট এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামকে বিবেচনা করা হয়।
ফ্রন্টিয়ার মার্কেট বলতে সেসব দেশের অর্থনীতিকে বোঝায়, যারা স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় বেশি উন্নত (উইকিপিডিয়ার ভাষ্য)। তবে এসব দেশকে উদীয়মান অর্থনীতিও বলা যায় না। কেননা, এসব বাজার অনেক ছোট এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব বাজারে অনেক প্রচ্ছন্ন ঝুঁকিও থাকে।
সারাবিশ্বে মাত্র ২৭টি দেশ এই শ্রেণিভুক্ত।
পুনরুজ্জীবিত রপ্তানির সাথে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন খাতগুলো এ বছর প্রবৃদ্ধির মূল চালক হবে বলে আইআইএফ আশাবাদী।
প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য উল্লেখ করেছে, অর্থনৈতিক মন্দাভাব মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সম্প্রসারিত মুদ্রানীতির আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাতে এবং তারল্যকে উদ্বুদ্ধ করতে নানা পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
অধিকন্তু, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার উপরে থাকতে পারে বলেও অনুমান করছে তারা।
আইআইএফ আরও জানিয়েছে, “তেলের কম দাম এবং খাদ্য মূল্যের ব্যাপক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে আমাদের মনে হয়, ২০২১ সালে মুদ্রাস্ফীতি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে।”
বস্তুত কম চাহিদার কারণে ভিয়েতনামের মুদ্রাস্ফীতি ৪.০ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা উপরে রয়েছে।
আইআইএফ আরও বলেছে, এশিয়ার ফ্রন্টিয়ার মার্কেটগুলো কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্থিক সহায়তা যোগান দিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে বাংলাদেশের ঘোষণা করা ১ লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে তাদের লেখনীতে।
ইতোমধ্যে সংকুচিত রাজস্বের কারণে বিদেশি আর্থিক সহায়তা ও টেকসই ঋণ ব্যবস্থার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ লক্ষ্য করছে আইআইএফ।
তাদের মতে, “বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে ঋণ সঙ্কটের ঝুঁকি কম। বছরের শেষদিকে দেশ দু’টিতে জিডিপির যথাক্রমে ৪০ এবং ৫৭ শতাংশ ঋণ থেকে আসবে বলে ধারণা করছি আমরা”।
এছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশ (ইএমএস) ও এশিয়ার বাইরের সীমান্ত বাজারভুক্ত (এফএমএস) দেশগুলোর তুলনায় কোভিড-১৯ এ ধাক্কা অনেক ভালোভাবে সামলেছে।
বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম সেই অল্পসংখ্যক দেশগুলোর দু’টি, যারা ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পেরেছিল। ভিয়েতনাম অতিমারি দমনেও সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
আইআইএফ আরো বলেছে, সঞ্চয় হার হ্রাসের পরিমাণ বর্তমানে এ অঞ্চলে অন্যতম সর্বোচ্চ।
এশিয়ার আরেকটি ফ্রন্টিয়ার মার্কেট অর্থনীতির দেশ শ্রীলংকার (২০১৯ এর শেষ থেকে ২৫০ বিপিএস) পরই রয়েছে ভিয়েতনাম (২০০ বিপিএস) ও বাংলাদেশ (১২৫ বিপিএস)।
আইআইএফের মতে, এই দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও একটি সহজ সরকারি বন্ড ক্রয় কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করেছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে আর্থিক ঘাটতি তুলনামূলক কম। লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় ২০২০ সালে বিদেশি শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার হার আশ্চর্যজনকভাবে অনেক বেশি ছিল।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অতিমারির বিস্তার আবারও বাড়লে আয়ের উৎসগুলোতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।