জাতীয়

আজ শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে ইতিহাসের নারকীয় পাশবিকতায় স্বপরিবারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয় খোদ স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতাকে। চরম রকমের বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশেও, ভাগ্যলিখনে সেদিন বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

জাতির ইতিহাসের এ বিষাদময় ঘটনার সময় বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা তার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে কর্মস্থল জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ভারত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা দলের সিদ্ধান্তে এক বজ্রকঠিন ব্রত নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন।

আজ থেকে ৩৯ বছর আগে উদারনৈতিক–প্রগতিশীলতার রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে, দেশ ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয়ার জন্য, জননী শেখ হাসিনা ত্যাগ করেছিলেন সন্তানদের মায়া পর্যন্ত! মাতৃসঙ্গ বঞ্চিত তাঁর দুই সন্তান তখন বিদেশে ছোটবোন রেহানার কাছে। গণতন্ত্র আর সুবিচার নিশ্চিত করার যুদ্ধে তখন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতিকূল রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন।

বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সংকল্পে শেখ হাসিনার স্বদেশে ফেরার দিনটি ইতিহাসের এক বড় সূচনাক্ষণ নতুন অধ্যায়ের। পরতে পরতে সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু কন্যার রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ফেরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের হাতে। দলীয় প্রধান হিসেবে ইতিহাস তার কাঁধে সমর্পণ করেছিলো জাতির কাণ্ডারি হবার দায়ভার।

সেই থেকে দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই জাতিকে মুক্তি দিতে বিরতিহীন যাত্রা একজন শেখ হাসিনার। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে সবার বাসোপযোগী করা প্রগতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের সেই যাত্রা রাজনৈতিক-পারিপার্শ্বিক আর প্রাকৃতিক শত প্রতিকূলতাতেও হার মানাতে পারেনি দৃঢ়চেতা এই নেত্রীকে।

প্রত্যাবর্তনের চার দশকে ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে বরাবরই দেখা গেছে কল্যাণমুখী মানসিকতায় যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সব সামলে নেয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূমিকায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য সুকৌশলে তিনি যুদ্ধ করে চলেছেন প্রাকৃতিক আর মনুষ্যসৃষ্ট সব বাধা-বিপত্তির বিপরীতে। পিতৃহারা শেখ হাসিনা যখন ঢাকায় ফিরেছিলেন সে সময়টাতেও প্রকৃতি ছিলো এক রুদ্র মূর্তির বাতাবরণে। কালবৈশাখীর ঝড় সামলে চলার শুরু হয়তো সেই থেকেই।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা চতুর্থ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজও মুখোমুখি এক অদৃশ্য ঝড়ের। নানান সূচকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে উঠতে, ঠিক তখনই বৈশ্বিক মহামারীর বাধা এসে হাজির। সংক্রমণ প্রবণ এক জীবাণুর (করোনা ভাইরাস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পুরো জাতি। এর মধ্যেও থেমে নেই এর করাল গ্রাস থেকে উত্তরণের চেষ্টা; যার নেতৃত্বও দিচ্ছেন সেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন দেশে ক্রমে বেড়েই চলেছে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ঠিক এর শুরু থেকেই এ যুদ্ধের জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সংক্রমণ রোধে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসবে জেনেও, দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে নিরাপদ করার প্রয়াসে নির্দেশ দেন ‘ঘরে থাকার’।

অর্থনীতি থেকে শুরু করে পরিবর্তিত সামাজিক বাস্তবতায় সবকিছু থমকে দেয়ার বৈশ্বিক এই দুর্যোগেও বিরতিহীন যিনি শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। অচেনা এই দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দিতে সমাজের সব শ্রেণির জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রতিনিয়তই ‘কিছু না কিছু’ বন্দোবস্ত করে চলেছেন তিনি।

এই যুদ্ধে জয়লাভের আকাঙ্ক্ষায় নিরলস শ্রমে তিনি নিত্য-নতুন নীতি আর প্রণোদনার আলোকে দেশবাসীকে যুগিয়ে চলেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর প্রেরণা। কোভিডের এই পরিস্থিতি সামলে নিতে কী করছেন শেখ হাসিনা? তার পদক্ষেপগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়:

  • কোভিড-১৯ এর শুরু থেকেই সবকিছু বন্ধ থাকার দরুন সার্বক্ষণিক দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছেন গণভবন থেকেই; প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন ঘরে বসেই।
  • ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সে খোঁজ রাখছেন মাঠ পর্যায়ে।
  • পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্ক সদস্য দেশগুলোর নেতৃবৃন্দসহ ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাথে।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে ঘোষণা করেছেন সহায়তার রকমারি উদ্দীপনা প্যাকেজ।
  • প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৮ টি প্যাকেজ ঘোষণা; যা দেশের মোট জিডিপি’র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
  • কুটির-মাঝারি-বড় শিল্পের পাশাপাশি প্রণোদনার আওতায় এসেছে রপ্তানিকারকসহ প্রান্তিক কৃষক শ্রেণিও।
  • বিপুল সংখ্যক রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ।
  • চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমা ও সম্মানী ভাতা চালুকরণ।
  • রেশন কার্ডের সুবিধার আওতা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীতকরণ।
  • কৃষকদের যথাসময় বীজ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা।
  • ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় ও দুর্নীতি রোধে ৬৪ জেলায় সচিবদের দায়িত্ব বণ্টন; অসদুপায়ের দায়ে ৫৫ জন জনপ্রতিনিধির বহিষ্কারাদেশ।
  • আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা নগদ প্রদান।
  • ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫০ লাখ পরিবারে নগদ ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সহায়তা প্রেরণ।

জনগণকে সচেতন করে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধেও চূড়ান্ত লড়াইয়ে লিপ্ত শেখ হাসিনা। অতীতের সব বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলার মতো করে এই মহামারী থেকে দেশ বাঁচাতেও সংকল্পবদ্ধ প্রধানমন্ত্রী। করোনা সেরে গেলে অথৈ সাগরে দেশের নিমজ্জিত হবার পরিস্থিতি রোধে তিনি যথাসম্ভব লড়ছেন ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে, আপন বুদ্ধিতে।

করোনা পরবর্তী দুনিয়ায় সামগ্রিক অর্থেই রাজনীতি, অর্থনীতি সব নীতিতেই নতুন ধারা অবশ্যম্ভাবী বলে আভাস দিচ্ছেন বিশ্ব বরেণ্য বিশ্লেষকরা। সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার একক নেতৃত্বগুণ শুধুমাত্র জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যারই রয়েছে; কেননা তাঁর সিদ্ধান্তেই যে দিশা খুঁজে পায় মুক্তিকামী-স্বাধীনচেতা মানুষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 19 =

Back to top button