আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এনডিবি এর সদস্য হচ্ছে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) সদস্য হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল ও এনডিবি’র প্রেসিডেন্ট মার্কোস প্রাদো ট্রয়জোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে সদস্য পদ দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী অনুরোধ করলে তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এনডিবি’র প্রেসিডেন্ট। অর্থমন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত ব্রিক্স জোটের প্রতিষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) হতে বাংলাদেশ সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ নিতে পারবে। এর ফলে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সহজে অর্থসংগ্রহ করা সম্ভব। এ ছাড়া এটি দেশের জন্য গৌরবেরও।
অর্থমন্ত্রী এনডিবি’র প্রেসিডেন্টকে ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও এনডিবি’র প্রেসিডেন্টের মধ্যে পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের বিগত ১২ বছরের অভাবনীয় অর্জন অবহিত করেন।
তিনি বলেন, সদস্য পদের জন্য যে সকল শর্ত রয়েছে তার সবগুলোই বাংলাদেশের রয়েছে। তাই অচিরেই বাংলাদেশ এনডিবির সদস্য পদ অর্জন করতে পারবে বলে আশা করছি। অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত কওে বলেন, সদস্য পদ লাভের পর এনডিবি ব্যাংক থেকে দেশের অবকাঠামোখাত উন্নয়নে সহজশর্তে ঋণ পাওয়া যাবে। সভায় এনডিবি’র প্রেসিডেন্টও বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশর প্রস্তাব বিবেচনা করেন। শিগগিরই পরিবারসহ বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, এনডিবির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের ২১শে জুলাই। ব্যাংকটির মোট মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলার। এ ছাড়া প্রাথমিক মূলধন ৫ হাজার কোটি ডলার রাখা হয়েছে। ২০১৬ সাল হতে এনডিবি অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্রিক্সভুক্ত দেশে ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি অবকাঠামো, সেচ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন, সবুজ জ্বালানি এবং নগর উন্নয়ন খাত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ প্রদান করে থাকে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের মতো এনডিবিও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে সদস্য রাষ্টসমূহের কার্যক্রমে ব্যাংকটি অংশগ্রহণ করছে। ২০২০ সালে ব্যাংকটি একসঙ্গে ৭২টি প্রকল্পে ২৫.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে। এনডিবির সদস্য পদ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য ব্যাংকের পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, সহনীয় সুদ হারে ঋণ নেয়ার সুযোগ তৈরি, ব্যাংকের কৌশল, নীতি, পদ্ধতি ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সদস্য দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পর সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগটি সীমিত হয়ে যাবে। ৫ বছর মেয়াদী ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫), টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), ভিশন-২০৪১, ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তায়ন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার লক্ষ্যে এনডিবি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অর্থায়নের উৎস হিসেবে সূচনা করবে বলে আশা করছে সরকার। সভায় এনডিবিতে বাংলাদেশের ভূমিকা, নতুন ব্যাংকের ঋণের শর্তাবলীসহ বিনিয়োগ খাত এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে এনডিবি’র সদস্যভুক্তির মূল কার্যক্রমে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে এবং এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।