Lead Newsআন্তর্জাতিক

আফগান সেনাবাহিনীতে মতবিরোধ, কমান্ডারদের ঐক্যে ভাঙনের সুর

তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে আফগান সেনাবাহিনীতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ঐক্যে ভাঙনের সুর উঠেছে। সেনাবাহিনীর নুতন প্রধান জেনারেল ওয়ালি আহমেদজাই নিজেই অধীনস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছেন।

কমান্ডারদের সঙ্গে তার মতের মিল হচ্ছে না। নতুন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে গুরুত্ব না দিয়ে কমান্ডারদের সঙ্গে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। পার্লামেন্টাটির কমিটির একটি তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।
টোলো নিউজ।

জেনারেল ওয়ালি আহমদেজাই আফগানিস্তানের নতুন সেনা প্রধান হিসেবে একমাস আগে নিয়োগ পান। যখন একের পর এক জেলাগুলো তালেবানের দখলে চলে যাচ্ছিল তখন সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল ইয়াসিন জিয়ার স্থলাভিসিক্ত হন আহমেজাই। তার প্রতি প্রত্যাশা ছিল তিনি আফগান সেনাবাহিনীকে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলবেন এবং প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সমৃদ্ধকরণের দিকে নজর দেবেন।

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ওলেসি জিরগার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমিটি জানিয়েছে, জেনারেল আহমেদজাই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিবর্তে কমান্ডারদের সঙ্গে কলহ সৃষ্টি করছেন। ওই নিরাপত্তার কমিটির প্রধান খান আগা রেজায়ী বলছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম নতুন সেনা প্রধানের নিয়োগে সেনাবাহিনী আরো শক্তিশালী হবে, তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রগতি হবে, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি দুঃখজনক যে, নতুন সেনা প্রধান কমান্ডারদের সঙ্গে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিবাদে জড়াচ্ছেন। এটা নিজেদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর সময় নয়।
১৯৮৬ সালের আহমেদজাই কমান্ডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৫ সালের তিনি মাইওয়ান্ড ইউনিটের কমান্ডার হন। তিন বছর পর তিনি ২০৯ শাহীন ইউনিটের কমান্ডার হন। এই দায়িত্বে তিনি ১৮ মাস ছিলেন।

এরপর তিনি আতাল ইউনিটের কমান্ডার পদে যোগ দেন। এসময় তিনি জাতীয় গণনিরাপত্তা বাহিনীর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। সেনাপ্রধান হওয়ার আগে তিনি ২০১ সালেব ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন।
খবরে বলা হচ্ছে, নতুন সেনা প্রধান জেনারেল আহমেদজাই তার অধীনস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখছেন না, যারা তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান করার সময় সহযোগিতা করেছিল। অথচ দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করার কঠোর অঙ্গীকার করেছিলেন ।

তবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি আহমেদজাই দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমরা কিছু অঞ্চল তালেবানের কাছে হারিয়েছি। কিন্তু আমরা বসে নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নতুন কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
মিলিটারি বিশেষজ্ঞ জাবেদ কোহেস্তানি বলছেন, ‘সেনাবাহিনী প্রধান ও কমান্ডারদের ঐক্যে ফাটল ধরলে দেশের পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। যুদ্ধের ব্যাপারে আমরা যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি, কিংবা একমত হতে না পারি তাহলে তালেবানের হাতে আমাদের পরাজয় ঘটবে।’

তবে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুহুল্লাহ আহমাদজাই বলছেন, সেনাপ্রধান দেশের আইন ও মিলিটারি রুলস মেনে দেশকে রক্ষার জন্য দিনরাত কাজ করছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতির যাতে উন্নতি ঘটে সেই চেষ্টাই তিনি করে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। সেনাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর অভিযোগও নেই কারও বিরুদ্ধে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + eight =

Back to top button