বিবিধ

আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি: ফিদেল ক্যাস্ট্রো

১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয় আন্তর্জাতিক মহল। জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কলকাতা২৪। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিরাট ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়েছিলেন কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ারর রাজধানী আলজিয়ার্সে নির্জোট সম্মেলনে তিনি একান্তে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশিষ্ট সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল। তাঁর বই মুজিবের রক্ত লাল থেকে বিখ্যাত অংশটি রইল। (বানান অপরিবর্তিত অবস্থায় তুলে দেয়া হলো)

মুজিব : এক্সেলেন্সি আপনি দয়া করে থামবেন না। আপনার কাছ থেকে আরও শুনতে চাই। আমার জ্ঞান চক্ষুর উন্মোচন হচ্ছে।

ক্যাস্ট্রো : অদূরে দণ্ডায়মান দেহরক্ষীদের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন- প্লিজ ত্রাই তু বাই দেম। অফার দেম হানদ্রেদ থাউজেন ডলার-তু। হানদ্রেদ থাউজেন হাফ এ মিলিয়ন। অল রাইট, অফার দেম ওয়ান মিলিয়ন ডলার, নো ইউ কানত বাই দেম। দিওরিং লং ওয়ার এ্যাগেইনসত ডিকতের বাতিস্তা, উই ফত তুগেদার ফ্রম দ্য সেম বাংকার। উই শেয়ার ফুড-বেড এ্যান্ড এভরিথিং। ইউ কানত ইমাজিন হাউ মাচ দে লাভ মী। আই স্মোক সিগার। মাই বয়েজ তেসত ইত ফাস্ট। তু অফ দেম দায়েইদ। বিকজ সিআই পয়জনিং। এক্সেলেন্সি ইন বাংলাদেশ হুম আর ইউ ‘ত্রাসতিং? লাইক কমরেড আলেন্দে, ইউ আর অলছো গোয়িং টু বি ফিনিশ কমরেড মুজিব।

(দয়া করে এদের কেনার চেষ্টা করুন। এঁদের অফার করুন এক লাখ ডলার-দুলাখ—অর্ধ মিলিয়ন ডলার। আচ্ছা ঠিক আছে, এঁদের এক মিলিয়ন ডলার অফার করুন। না, আপনি কিছুতেই এঁদের কিনতে পারবেন না। ডিক্টেটর বাতিস্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের লড়াই-এর সময় আমরা একই বাংকারে থেকে যুদ্ধ করেছি। এ সময় আমরা খাওয়াদাওয়া, বিছানা-সবকিছু একই সঙ্গে ভাগ করেছি। আপনি ধারণাও করতে পারবেন না এরা আমাকে কী পরিমাণ ভালোবাসে। আমার চুরুট খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাই আমার ছেলেরা প্রথমেই প্রতিটি প্যাকেট থেকে চুরুট টেস্ট করে দেখে দুজন তো মরেই গেল। কারণ সিআইএ-র এজেন্টরা বিষ মিশিয়েছিল। এক্সেলেন্সি, বাংলাদেশে আপনি কাদের বিশ্বাস করেছেন? কমরেড আলেন্দের মতো আপনিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন কমরেড মুজিব।)

সবার চোখ তখন অশ্রু সজল। এবার বিদায়ের পালা। হাতের অর্ধদগ্ধ চুরুটটা এ্যাশট্রেতে রেখে ধীর পদক্ষেপে ফেদে ক্যাস্ট্রো এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। এরপর ক্যাস্ট্রো-মুজিব উষ্ণ আলিঙ্গন আর পরস্পর চুম্বন। আলিঙ্গনের শেষ মুহূর্তে মুজিবের কাধে মাথা রেখে অকস্মাৎ ঘরের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে ক্যাস্ট্রো বলে উঠলেন, ‘কমরেড মুজিব, আই লাভ ইউ আই লাভ ইউ। আই লাভ বাংলাদেশ।’ (অর্থাৎ কমরেড মুজিব, আমি তোমায় ভালোবাসি-আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি)। গাড়ি বারান্দার স্টার্ট দিয়ে রাখা বিরাট ‘লিমোজিন’-এ উঠতে যেয়ে হঠাৎ মাথাটা একটু তেরছা করে ঘুরিয়ে ক্যাস্ট্রো চীৎকার করে স্লোগান দিলেন ‘জয় বাংলা’।

আমরা কিছু বোঝার আগেই ঝড়ের বেগে সব কটা গাড়ি বেরিয়ে গেল। …

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর আবেগতাড়িত উপমা- ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।’

সূত্র: কলকাতা২৪ 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + 14 =

Back to top button