আ’লীগের প্রতিপক্ষ আ’লীগ: তৃণমূলে ঝরছে রক্ত
কাছাকাছি সময়ে দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মাঠ। শীতের আগমনী সময়ে গ্রামে পিঠাপুলি আর আন্তরিকতার ভাগাভাগির পরিবর্তে ঝরছে রক্ত। নির্বাচনী দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছে সংঘাতে। প্রতিদিনই হতাহতের খবর আসছে।
আসছে ১১ নভেম্বর সারাদেশে দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ২৮ নভেম্বর এক হাজার সাতটি ইউপিতে ভোট। এ উপলক্ষে বিরাট কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু দেশব্যাপী রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে একাধিক পক্ষ। নির্বাচনে তেমন কোনো বিরোধী পক্ষ না থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ খোদ আওয়ামী লীগ। সংঘাত ও হতাহতের বেশিরভাগ ঘটনা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশন ‘বিব্রত’ আর উদ্বেগ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও কাগুজে ব্যবস্থা নেওয়ার হুংকার দিয়ে ক্ষান্ত। তৃণমূল নেতারা বলছেন, এ সংঘাত সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এড়ানোর জো নেই, সমাধানেরও পথ দেখছি না।
এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো নিয়ে আমরা বিব্রত। সেটা নিয়ন্ত্রণে আমরা কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠ-পর্যায়ে দিক-নির্দেশনা দেবো। এ নিয়ে আগামী ৪ তারিখ বিস্তারিত আলোচনা করবো।’
ঢাকা ও খুলনায় সংঘাতের আশঙ্কার কথা জানায় মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। সমাধানে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া ও আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করেন মাঠ প্রশাসন।
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম ধাপের নির্বাচন ভালো হয়েছে। তবে এরপর সহিংসতা বেড়েছে। এজন্য আমরা বিব্রত ও উদ্বিগ্ন।’ তিনি প্রশাসনকে ‘কঠোর’ হতে ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘অতি উৎসাহী কর্মীদের বাড়াবাড়ি’ বন্ধের আহ্বান জানান।
এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও তাদের মদতদাতা, উসকানিদাতা নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন।
তিনি জানান, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রধানের নির্দেশে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অপকর্ম করলে কেউ রেহাই পাবেন না—শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
একইভাবে কাগুজে হুংকার দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নিতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে সমর্থন দিতে হবে। বিদ্রোহী হয়ে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেয় না আওয়ামী লীগ।
এ নিয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি খোন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, ‘এ সংকট সমাধানে প্রার্থী বাছাইয়ে তুলনামূলক জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ মানুষকে বাছাই, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দলীয় মনোভাব পরিহার ও মাঠে বিরোধী দল থাকাসহ আরও কিছু ব্যাপার থাকলে এমন পরিস্থিতি হয় না। অন্যথায় এ সংঘাত থাকবেই।’