রাজনীতি

আ.লীগ এজেন্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছেঃ মির্জা ফখরুল

জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে আওয়ামী লীগ এজেন্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন হলে কর্মী সভার আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনি ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব ফেসবুক না কাঁপিয়ে আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় কর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং এমন বিশৃঙ্খল কর্মীদের পক্ষে আন্দোলন করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করি এবং হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের পাশে ভাইয়ের মতো দাঁড়াই। বাবরি মসজিদের ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রত্যেক জেলায় জেলায় ফোন করে বলেছিলেন, বাংলাদেশে যেন কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা না হয়। কোথাও যেন পূজামণ্ডপ বা মন্দির কেউ ভাঙতে না পারে। এই ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলেন। আমরা সফল হয়েছিলাম সেদিন। দেশে কোথাও কোনো ঘটনা আমরা ঘটতে দিইনি। আর এরা কী করেছে? এদের যেসব এজেন্ট আছে তাদের দিয়ে ঘটনা ঘটানোর জন্য কুমিল্লায় এ কাজটি করেছে। জঘন্য ঘটনা। তারপর ওই ঘটনার সূত্র ধরে চাঁদপুর, চৌমুহনী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি করে তারা দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

ড. হাছান মাহমুদ (তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী) বারবার বলছেন, এটার পেছনে নাকি বিএনপি আছে। আরে করাচ্ছ তো তোমরা। তোমরা জানো এসব ঘটনা না ঘটালে জনগণ গণতন্ত্র ও অধিকারের জন্য আন্দোলন করবে। সেটাকে ডাইভার্ট করতে হবে। দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা ভুক্তভোগী। এখানে বিরোধী রাজনীতির কোনো সুযোগ রাখা হচ্ছে না। মিটিং করতে দেওয়া হয় না। পুলিশ হামলা করে। গ্রেফতার করে। মিথ্যা মামলা দেয়। এবারও মামলা দেওয়া শুরু করেছে। চৌমুহনীর ঘটনায় আমাদের সেখানকার নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। অথচ র‌্যাব-পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসী কিছু লোক ভাঙচুর করেছে। মামলা দিচ্ছে আমাদের নামে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মাথা ঠাণ্ডা রেখে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৌশলে নিজেকে দৃঢ়চেতা রেখে আন্দোলন করতে হবে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে, শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। খালি ফেসবুক রাজনীতি করলে চলবে না। তৈরি হয়ে থাকতে হবে। যখনই ডাক দেওয়া হবে, মাঠে নামবেন।

সার্চ কমিটির বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিসের সার্চ কমিটি? সার্চ কমিটি তো করবেন আপনারা। যাকে পছন্দ হবে, তাকে দিয়ে সার্চ কমিটি করবেন। নিজেদের লোক বসাবেন। আবার হুদা মার্কা একটা নির্বাচন কমিশন তৈরি করবেন। যারা আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দিয়ে দেবে। ওই ফাঁদে আর দেশবাসী পা দেবে না। মানুষ ভোটই দিতে চায় না। কোনো আস্থা নেই নির্বাচন কমিশন বা সরকারের ওপর। জনগণের পরিষ্কার কথা, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। সেই অবস্থা সৃষ্টি না হলে আর জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। বিএনপির সময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিল। যার ফলে চার-চারটা নির্বাচন হয়েছে। কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ওই ব্যবস্থায় ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সেটাকে গ্রহণ করেছিলেন। আমরা কি দেখলাম, আদালতের সমর্থন নিয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে এলো। আমরা আর আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনের ফাঁদে পা দিচ্ছি না। এ দেশের মানুষ ভালো করেই জানে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা এএম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোসতাক আহমেদ খান প্রমুখ।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + twelve =

Back to top button