আ.লীগ নেতার বাসায় মিলল ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়ি থেকে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় শহরের থানাপাড়ার আফজাল সুজের সাবেক স্বত্বাধিকারী হাসান আলীর (৩৯) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানাকে বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, নিহত হাসান জেলা শহরের স্টেশন এলাকায় জুতার ব্যবসা করতেন। পাওনা টাকার সুদের কিস্তি পরিশোধ না করায় ওই ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে এসে মাসুদ রানার বাড়িতে আটকে রাখা হয়। আজ শনিবার সকালে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।
সদর থানায় দায়েরকৃত গত ৭ মার্চ হাসান আলীর স্ত্রী বিথি বেগমের এক লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মাসুদ রানা একজন দাদন ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া টাকার সুদের কিস্তি দিতে না পারায় গত ৬ মার্চ হাসান আলীকে সকাল ৯টায় তার থানাপাড়ার বাসা থেকে মাসুদ রানা ব্যবসা সংক্রান্ত কথা আছে বলে নিজ মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে চলে যায়।
এরপর মাসুদ রানা তার নিজ বাসায় হাসানকে আটকে রেখে মানসিকভাবে নানা ধরণের নির্যাতন চালায় এবং ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।
হাসান আলী তার স্ত্রী বিথী বেগমকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করলে ওই বাড়ি থেকে সে তার স্বামীকে নানাভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এসময় মাসুদ রানা আটক হাসান আলীকে ছেড়ে না দিয়ে উল্টো তার স্বামীর আরও বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে বিথী বেগমকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এমতাবস্থায় বিথী বেগম থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ দায়েরকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ পুলিশ হাসানকে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানা থেকে ছেড়ে দিলে মাসুদ রানা আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায় তার বাড়িতে।
সেই থেকে মাসুদ রানার বাড়িতেই আটক থাকে হাসান আলী। পরে তাকে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ মাসুদ রানার বাড়ি গিয়ে হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে।
হাসান আলীর স্ত্রী বিথি বেগম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাসান আলীকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানাকে হ্যান্ডকাপ ছাড়াই থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে ও কোমরে দড়ি লাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।
এসময় বিক্ষুব্ধ অনেকে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে থানা থেকে আরও পুলিশ গিয়ে মাসুদ রানার হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে এবং হেলমেট পরিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, হাসান আলী আত্মহত্যা করলে তার নিজ বাড়িতে করবে। কিন্তু মাসুদ রানার বাড়িতে হাসান আলী কেন আত্মহত্যা করবে? এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার বাসায় এক ব্যক্তির লাশ ঝুলে থাকার খবর পেয়ে সদস্যরা সেখানে যান। দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এসময় মাসুদ রানাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজার রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না এটি হত্যা, না আত্মহত্যা। তদন্ত চলছে।’