উজানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮টি পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে নদীর করাল গ্রাসে গৃহহীন হয়েছে চার শতাধিক পরিবার। বিলীন হয়েছে শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালা, জলাশয়, পুকুরসহ দুটি মসজিদ। ভাঙনকবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।
একদিকে জিওব্যাগ ও জিওটিউব দিয়ে চলছে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা। অপরদিকে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ভাঙন কবলিতদের কান্না। এ রকম বিষাদময় অবস্থা বিরাজ করছে তিস্তা পাড়ের জনপদে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহমুদ হাসান, থেতরাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার জানান, তিস্তা ব্রিজ থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার উন্মুক্ত জায়গায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে ৮টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করলে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন শুরু করেছে। ফলে গত এক সপ্তাহে জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৪ শতাধিক পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করেছে।
বর্তমানে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দিয়েছে উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার ও বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকায়। এছাড়াও রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, সরিষাবাড়ি ও খিতাব খাঁ গ্রামে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দিয়েছে।
যদিও এই তিন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এর অপর সাইটে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত ৫ দিনে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামে ৬১টি ভাঙনকবলিত পরিবারকে উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-জান্নাত রুমি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে থেতরাইয়ের গোড়াই পিয়ার গ্রামে ম্যাচাকার ভাঙনে ৬১ ঘর বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিতদের সরকার থেকে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীতে প্রায় ৮টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙন রোধে আমরা বিভিন্ন স্থানে জিওব্যাগ ও জিওটিউব স্থাপন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে নতুনভাবে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেটি অনুমোদন হলে তিস্তা নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে রেহাই পাবে।
বুধবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন জানান, এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা। তিস্তার ভাঙন রোধে প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন; যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই জনপদের মানুষের আর্থিক, সামাজিক সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন ঘটবে। উলিপুরে এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। মানুষের দুর্ভোগে প্রশাসন তাদের পাশে আছে। আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি।