পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো মুখ কথা বলেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশীদের মাঝে বিদ্বেষ কোনও পক্ষের জন্যই ভালো বয়ে আনবে না।’’ সোমবার দেশটির সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘আর্মি ডে’র আগে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একসাথে থাকতে হবে, একে অপরকে বুঝতে হবে এবং কোনও ধরনের শত্রুতা আমাদের একে অপরের স্বার্থের জন্য ভালো হবে না।’’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান যে মন্তব্য করেছিলেন আমি আপনাকে সেটি মনে করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছিলেন, কৌশলগত দিক থেকে ভারত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দিক থেকেও বিষয়টা একই। কৌশলগত কারণে আমাদের জন্যও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।’’
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি ভারত-ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এদেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক – ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা।
জেনারেল ওয়াকারের মতে- যেকোনো দেশ সবসময় অন্যদেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে- ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।
সোমবারের এ সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তের বেশিরভাগই ভারতের সঙ্গে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছোট একটি অংশ মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে। এছাড়া দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও ‘সমস্যা নেই’ বলেও দাবি করেছেন জেনারেল দ্বিবেদী।
ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যখন ক্ষমতার পালাবদল ঘটল, তখন থেকেই আমি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এমনকি গত ২৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সেও আমাদের কথা হয়েছে।’’
‘‘সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে বলা যায়, সেটি আবারও আগের মতোই চলছে। আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে এনডিসিতে যোগ দিয়েছেন। এই বিষয়ে কোনও ছাড় নেই। কেবল একটি বিষয় হল, যে যৌথ মহড়া চালানো হতো, এখনকার পরিস্থিতির কারণে আমরা কিছু সময়ের জন্য সেটি স্থগিত করেছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেই মহড়াও হবে।’’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সীমান্ত এলাকায় বেড়া নির্মাণ করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাঝেই ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী বাংলাদেশ ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন।
বার্ষিক এই সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচিত সরকারের বিষয়ে উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সেদিক থেকে সেনাবাহিনী পর্যায়ে এখন পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক ভালো এবং একদম সঠিক রয়েছে।’’