করতোয়া নদী যেন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়!
বিষাক্ত বর্জ্যে বিপন্ন করতোয়া
পানির দূষণ বিপজ্জনক স্তরে
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার ভারী ধাতুর অস্তিত্ব
বগুড়া শহরের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী দূষণমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। নদীর কোনো কোনো অংশে এই দূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে। পরিবেশ অধিদফতরের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
মৎস্য অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ দেশের বেশ কয়েকটি নদী নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। এরমধ্যে করতোয়া নদীও রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে করতোয়া নদীর পানিতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার ভারী ধাতু রয়েছে।
কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে, নদীগুলোর তীরে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ শিল্পকারখানা তাদের বর্জ্য পরিশোধন না করে নদীতে ফেলছে। একইভাবে নদীর একাধিক অংশে পৌরসভার নালা সংযুক্ত।
সেখান দিয়ে বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্য পড়ছে। এছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত হওয়া মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকও সেচের পানির সঙ্গে ধুয়ে নদীতে যাচ্ছে। হাটবাজার, শহর ও বস্তি এলাকার গৃহস্থ বর্জ্য ফেলার সবচেয়ে বড় ভাগাড়ও এই নদীতে।
শনিবার (৫ জুন) আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকালে জানা গেছে, বগুড়ার করতোয়া নদীর দূষণ রোধে এতে ময়লা ও আবর্জনাসহ যেকোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ।
শহরের ফতেহ আলী বাজারের পূর্বদিক থেকে দক্ষিণে জেলা কারাগারের সামনের অংশের নদী তীরবর্তী এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বছরজুড়ে সেখানে রাতদিন বর্জ্য ফেলা হলেও যেন দেখার কেউ নেই। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলো স্রোতে ভেসে যায়। তবে এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় ফতেহ আলী সেতুর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত বর্জ্যের পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।
শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব বগুড়া পৌরসভার। এ জন্য করতোয়া নদীতে বর্জ্য না ফেলার বিষয়টি তদারকির জন্য আদালত পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা উদাসীন।
নদীর দখল ও দূষণ রোধে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। তাতে বগুড়া জেলা প্রশাসক, পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ২১ জনকে বিবাদী করা হয়।
শুনানি শেষে আদালত একই বছর করতোয়া নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ওই নদীতে সব ধরনের বর্জ্য ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতে সেই নির্দেশনা আলোর মুখ দেখেনি।
সূত্রঃ জাগোনিউজ