করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন: বেক্সিমকোর সাথে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে
দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উন্নয়নে সেরাম ইনস্টিটিউটে বিনিয়োগ করবে বেক্সিমকো। শুক্রবার(২৮ আগস্ট) বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এছাড়াও, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ করবে ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
ওই করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের পেটেন্ট নিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা উৎপাদন করার দায়িত্ব পেয়েছে এবং ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বেক্সিমকো একটি চুক্তি করেছে।
শুক্রবার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভ্যাকসিনটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে প্রথম যে দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবে’ বাংলাদেশ হবে তার মধ্যে একটি।
সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের বাজারে শুধুমাত্র বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই সরবরাহ করতে পারবে।
সংখ্যার হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনটি বাদেও করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য আরো দু’টি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল পরিচালনা করছে তারা।
কী বলছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস?
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বিবিসি বাংলাকে জানান, ভ্যাকসিনের খরচ এবং কত দ্রুত এটি পাওয়া যাবে, এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তারা সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ করেন।
মি. রেজা বলেন, “বিশ্বে মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন এই বছরের শেষভাগের মধ্যেই প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
“আর বিশ্ব বাজারে এই ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলে প্রথম দিক থেকেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।”
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই ভ্যাকসিন তৈরিতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসেবে কাজ করছে বলে জানান রাব্বুর রেজা।
তিনি বলেন, “এরই মধ্যে বিশ্বে ৬৭০ কোটি কোভিড ভ্যাকসিন বুক করা হয়ে গেছে। তাই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার জন্য ট্রায়ালগুলো খুব কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা আর ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা বাড়ানো, এই দু’টি জিনিস প্রয়োজন।”
“আমরা যে তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন কিনে নিচ্ছি, বিষয়টা সে রকম নয়। সেরাম ইনস্টিটিউট যেন কম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারে, সেই লক্ষ্যে বেক্সিমকো তাদের সহায়তা করছে”, বলেন রাব্বুর রেজা।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকাটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ এবং সেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে তুলতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে।
বিশ্বের ‘সবচেয়ে সস্তা’ ভ্যাকসিন
সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনের জন্য কত খরচ করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও রাব্বুর রেজা জানান যে এই ভ্যাকসিন বিশ্বের ‘সবচেয়ে সস্তা’ ভ্যাকসিনগুলোর একটি হবে।
তিনি বলেন, “কী পরিমাণ ভ্যাকসিন নেয়া হবে, তার ওপর ভ্যাকসিনের দাম অনেকাংশে নির্ভর করছে। আমরা এরই মধ্যে সরকারের সাথেও আলোচনা শুরু করেছি। আমরা চাইবো যত কম খরচে সম্ভব, এই ভ্যাকসিন যেন মানুষকে দেয়া যায়।”
“সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের নিশ্চিত করেছে যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ভ্যাকসিন হবে।”
বেক্সিমকো এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও এটি বাজারজাত করবে বলে জানিয়েছেন রাব্বুর রেজা।
বাংলাদেশে এরই মধ্যে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।