দেশবাংলা

করোনার এই সময়ে বন্যা, দেশের ১০ জেলা প্লাবিত

দেশের দশটি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, দেশের ১৫ টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে আবার কোথাও অবনতি। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্যই এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে গত দুই তিন দিন অবস্থার যতটা অবনতি হয়েছিলো এখন তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমায় এখন বন্যার পানি কিছুটা ধীর গতিতে বাড়ছে।

তবে তিনি যোগ করেন, উত্তরাঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে, পরে আবার বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির যে উন্নতি হচ্ছে সেটা অব্যাহত থাকবে।

মহামারীর এই সময়ে এমন দুর্যোগ আসায় মাঠ পর্যায়ের সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেরপুর
বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ৩০ জুন মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ দশমিক ৬৫ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিলো বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজরিডার মোস্তফা মিয়া।

তিনি বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে যেকোনো মুহূর্তে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে এর শাখা দশানী এবং মৃগী নদীতেও পানির প্রবল স্রোত বইছে। নদ-নদীগুলোতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শেরপুর সদরের বেপারীপাড়া, জঙ্গলদী, নকলার চন্দ্রকানা, বাছুর আলগা ও নারায়ণখোলা এলাকার নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নেত্রকোনা
নেত্রকোনায় গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা এবং কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কংষ, ধনু উব্দাখালি সহ সব নদী পানি বিপদসীমার নীচে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়ছে নতুন নতুন এলাকা। আজ সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

জেলার ৪ উপজেলার সুন্দরগঞ্জের ৪ টি ইউনিয়ন, গাইবান্ধা সদরের ৩টি, ফুলছড়ির ৬টি ও সাঘাটার ৫টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।

গাইবান্ধা-বালাসীঘাট পাকা সড়কটির আধা কিলোমিটার এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সড়কের উপর দিয়ে এখন নৌকা চলাচল করছে।

বাড়িঘরে পানি ওঠায় ওইসব বন্যা কবলিত মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অথবা উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও পয় নিস্কাশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫শ”৫২ হেক্টর জমির আমন বীজ তলা, পাট, চিনা বাদাম, শাক সবজি সহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৩০ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক পরিবার বাঁধে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে।

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি করতোয়া ও বড়ালসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বেড়েই চলেছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার ৫টি উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির আখ, পাট, তিল, বাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। এছাড়া চরাঞ্চল সহ নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।

সুনামগঞ্জ
বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে উজান থেকে পানি ভাটি এলাকায় নামতে থাকায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বাড়ছে। দিরাই পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে জেলা জুড়ে ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটের।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানায়, মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৪ মি.মি.।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 8 =

Back to top button