করোনাভাইরাসধর্ম ও জীবনলাইফস্টাইল

করোনার মধ্যে নিরাপদে রোজা রাখবেন যেভাবে

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘লকডাউন’ চলার মধ্যেই মুসলিমদের জন্য পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিম সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে রোজা পালন করেন। কিন্তু যখন কোনো মহামারি চলে তখন রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়।

ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স-এর রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক একজন গবেষকের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, সংক্রমণের বিরুদ্ধ লড়াই করার জন্য শরীরে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার এবং পানি পান না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে।

সুতরাং ইফতারের পর আপনি যেসব খাবার খাবেন সেখানে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি থাকে সেটা নিশ্চিত করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দুটো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।

১) কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি

২) ভিটামিন, যেমন-ভিটামিন সি এবং আয়রন

বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। বিশেষ করে নানা রংয়ের সবজি, ফল, ডাল ও বাদাম। রোজার সময় শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। এর ফলে শরীরের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার জায়গা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু আপনি যদি পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকেন তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরী থাকতে পারে। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, আপনি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হবার বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকবেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাত ধোয়া এবং বাসায় অবস্থান করা।

অসুস্থ ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কী হবে?

যেসব মানুষের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ কিংবা অন্যান্য অসুস্থতা আছে তাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা আছে।

ডায়াবেটিস ইউকে হেড অব কেয়ার ড্যানিয়েল হাওয়ার্থ বলেন, ‘যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা রোজা রাখবেন কি না সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর।’

তবে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে তারা কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

যেমন-যেসব কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরে ধীরে-ধীরে ছড়ায় সেগুলো খেতে পারেন। যেমন লাল রুটি, ভাত। এ ছাড়া দিনে বেশ কয়েকবার ডায়াবেটিস পরিমাপ করে দেখতে হবে।

ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য একটি পরামর্শ দিচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য কর্মীরা যেহেতু কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন সেজন্য তাদের দীর্ঘ সময় ধরে পিপিই পরিধান করতে হয়। সেজন্য তাদের শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে এবং চিকিৎসায় ভুল হতে পারে। সেজন্য স্বাস্থ্য কর্মীরা রোজা না রাখলেও চলবে।

রোজা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

যদিও প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি না খাওয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর রোজার প্রভাব এতটা সরাসরি নয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনো একটি ইলেকট্রিক সুইচের মতো নয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে শরীরে ভেতরে জটিল এক প্রক্রিয়া যেখানে অনেক কিছুর ভারসাম্য রাখতে হয়। রোজা রাখলে শরীরের ভেতরে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখে।

তবে ইঁদুরের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় না খেয়ে থাকার উপকারিতার কথাও বলা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে মাঝে-মধ্যে না খেয়ে থাকলে শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। এর ফলে শরীরের পুরনো কোষ মারা যায় এবং সে জায়গায় নতুন কোষ জন্ম নেয়।

তবে ইঁদুরের ওপর যেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে সেটি মানুষের ওপর কতটা কার্যকরী হবে তা বলা কঠিন। এজন্য আপনাকে কতক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে সেটিও পরিষ্কার নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − sixteen =

Back to top button