করোনায় বেড়েছে মৃত্যু সংখ্যা, দাফন করতে করতে ক্লান্ত স্বেচ্ছাসেবীরা
এপ্রিলের শুরুতে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার দুটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৪ এপ্রিল স্বামী মারা যান। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্ত্রীও মারা যান।
তাদের মধ্যে স্বামীর বয়স ৭১ এবং স্ত্রীর বয়স ছিল ৬৫ বছর।
তাদের দুজনের স্থায়ী বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। দুজনকেই দাফন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সেচ্চাসেবক দল।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই সপ্তাহে অনেকটা বেড়ে গেছে।
এই জেলায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকের দাফন ও সৎকারের সাথে গত এক বছর ধরে জড়িত রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, লাশ দাফন করতে করতে তার দলের সদস্যরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশে গত এক মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে মার্চে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৭১ জন মানুষ মারা গেছে। অথচ এর পরবর্তী এক মাসে, অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৫ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪২ জন মানুষ মারা গেছেন। অর্থাৎ পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে ৫ গুন বেশি।
মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে বেশ দ্রুত গতিতে।
এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায়।
ঢাকার স্বেচ্ছোসেবী সংস্থা আল-মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশে গত এক বছর যাবত কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফনের কাজ করছে।
সংস্থাটির একজন কর্মী বলছেন, গত দুই সপ্তাহ যাবত এতো বেশি লাশ দাফন করতে হচ্ছে যে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের একজন কর্মী আনোয়ার হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, গত দুই সপ্তাহ যাবত লাশ দাফনের জন্য প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৫০টি ম্যাসেজ আসছে তাদের কাছে।
অথচ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লাশ দাফন একেবারেই কমে গিয়েছিল।
‘তখন আমরা ম্যাসেজ পেতাম প্রতিদিন তিনটা বা চারটা। এমন দিনও ছিল যে কোনো ম্যাসেজ পাইনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে,’ বলেন আনোয়ার হোসেন।
একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে।
গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবার তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।
‘গত বছর এই সময়ে আমরা প্রতিদিন ১-২টি দাফন করেছি। সর্বোচ্চ এক দিনে ছয়টি লাশ দাফন করেছি।’
তবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিমাসে দুই থেকে তিনটি লাশ দাফন করেছে খন্দকার খোরশেদের দল। কিন্তু মার্চ মাসের শুরুতে পরিস্থিতি হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকে।
কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বলেন, গত ৯ দিন যাবত প্রতিদিন তিনটি করে লাশ দাফন করেছে তার দল। এর মধ্যে বুধবার চারজনকে দাফন করা হয়েছে।
‘এবার মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি অবশ্যই ভয়াবহ। যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে, আগে এরকম মারা যায় নাই,’ বলেন খোরশেদ আলম।
নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে বেশ দ্রুত গতিতে। গত বছরের তুলনায় এবার রোগীদের অনেক বেশি অক্সিজেনের চাহিদাও তৈরি হয়েছে।
‘গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন এক-দুই জন রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে হতো। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ যাবত প্রতিদিন সাত থেকে ৯ জন রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে হচ্ছে,’ বলেন খোরশেদ আলম।
যেভাবে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি ভেবে এখন উদ্বিগ্ন কাউন্সিলর খোরশেদ।
সূত্র : বিবিসি