Lead Newsস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

কিটো ডায়েট সংক্রান্ত ভিডিও সরাতে হবে, অন্যথায় ‘অপচিকিৎসার’ অভিযোগে মামলা হবে

চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিটিলিস (এফডিএসআর) বলছে, ডা. জাহাঙ্গীরের কেবল ক্ষমা চাইলেই হবে না। কিটো ডায়েট সংক্রান্ত তার সব ভিডিও সাত দিনের মধ্যে সরাতে হতে। তা না হলে ‘অপচিকিৎসার’ অভিযোগে মামলা করা হবে।

কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ‘অপচিকিৎসার’ অভিযোগ তোলার পর দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
একই সঙ্গে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে বিতর্কিত ভিডিওসহ মোট তিনটি পোস্ট সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর। তবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিটিলিস (এফডিএসআর) বলছে, ডা. জাহাঙ্গীরকে কিটো ডায়েট সংক্রান্ত সব ভিডিও সরাতে হতে। তা না হলে ‘অপচিকিৎসার’ অভিযোগে মামলা হবে তার বিরুদ্ধে। এর আগে সোমবার বিতর্কিত ভিডিও সরিয়ে নিতে ডা. জাহাঙ্গীরকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয় এফডিএসআর।

ডা. জাহাঙ্গীর মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বলেন, ‘টিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা ভিডিওটি ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেরা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’
এরপরই নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন আলোচিত এই চিকিৎসক। এতে তিনি বলেন, ‘সুস্থ থাকার লক্ষ্যে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা নিয়ে কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে আমার রোগীদের লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। ইদানিংকালে আমার একটি ভিডিও এবং দুটি পোস্ট নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
‘প্রথমত সুস্থ থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আমি একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলাম সেখানে করোনার ভ্যাক্সিন বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমার অসাবধানতা বশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।’ এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি। একইসাথে সকলকে ভ্যাক্সিন দেয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি।’

এরপরেও কয়েকজন সম্মানিত ডাক্তার ‘ভুল বুঝে’ সরাসরি নাম উল্লেখ করে নানা ধরনের পোস্ট করেছেন উল্লেখ করে ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তন্মধ্যে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট আমি আমার পেইজে শেয়ার করেছিলাম। এছাড়া অন্য একটি জনসচেতনতামূলক পোস্টে উদাহরণ স্বরুপ একটি প্রেসক্রিপশন শেয়ার করেছিলাম।
‘ওই প্রেস্ক্রিপশনটি যিনি লিখেছিলেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি তার নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি প্রকাশ করিনি। তথাপি এই পোস্টটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তৎক্ষণাৎ দুটি পোস্টই ডিলিট করে দেই।’
ডাক্তার সমাজের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসেবা ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন ডা. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার হিসেবে আমি কখনোই কাউকে অসম্মান করতে পারি না এবং আমি তা করতে চাইও না। তবুও আমার অনিচ্ছায় তা হয়ে থাকলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’

ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উপরোক্ত বিষয়গুলোর বাইরে আরও যে বিষয়ে সমালোচনা এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হল আমার পরামর্শকে কিটো ডায়েট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি বহুবার নানান ভিডিওর মাধ্যমে বলেছি যে আমি শুধু ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলি না। আমি মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি অটোফেজি, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক প্রশান্তির চর্চা করাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেই। আমি কখনোই ঔষধবিরোধী না, আমি সব সময় বলে এসেছি জরুরি চিকিৎসায় ঔষধ অপরিহার্য। তবে লাইফস্টাইল রোগগুলো লাইফিস্টাইল মডিফাই করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও আমার রোগীদের প্রয়োজনে ঔষধ লিখছি সুতরাং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।’

ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সকলের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে তাই আপনারা আমার কোনো ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তা শুধরে নেব। নিজের ভুলকে আমি ভুল হিসেবে গ্রহণ করে তা শুধরে নেব আর আপনাদের কাছেও আমার অনুরোধ আপনারা আমার পূর্বের ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।… আমার কথায় হয়তো অনেক সহকর্মী – সিনিয়র চিকিৎসক কষ্ট পেয়েছেন কিংবা মনক্ষুন্ন হয়েছেন। আমি তাদের সবার প্রতি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’

ডা. জাহাঙ্গীরকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া এফডিএসআর-এর মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারোরই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করা ও অসত্য বলার অধিকার নেই এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি জীবনধারা পরিবর্তন ও এর মাধ্যমে নানা রকম ক্রনিক রোগের চিকিৎসা করছেন বলে দাবি করেন। এজন্য অনলাইন ও অফলাইনে মানুষকে সুস্থ জীবন গড়ে তোলার জন্য লাইফস্টাইল বা জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এসবই আপাত দৃষ্টিতে চমৎকার কাজ, কিন্তু আপনার মনে রাখতে হবে আপনার পরামর্শ হতে হবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সমর্থিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক। শুধু তাই নয় এসব পরামর্শ যাতে কারও ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ডা. জাহাঙ্গীর কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিলেও এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক কাউন্সেলিং করেন না বলে অভিযোগ করেন ডা. শেখ আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘তিনি (ডা. জাহাঙ্গীর) ডায়াবেটিক রোগী ও কিডনি রোগীকেও কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়েছেন বলে আমরা জানি। এই ডায়েটের ফলে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি যেসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে সেটা নিয়ে তিনি কখনও রোগীদের অবগত করেন না। এটা ম্যালপ্র্যাকটিস। অথচ কিটো ডায়েটের জন্য রোগীর ইনফর্মড কনসেন্ট নেয়া বাধ্যতামূলক। ‘তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের দেয়া প্রেসক্রিপশনকে হেয় করে মন্তব্য করছেন। টিকা নিয়ে ইম্যুনোলজি বিষয়েও ভুল বক্তব্য দিয়েছেন।’

ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শুধু টিকা সংক্রান্ত দুইটা ভিডিও সরানোর কথা শুনেছি। তবে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দেয়ার ভিডিও এখনও রয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ ছাড়া চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শের ভিডিও রয়েছে। এগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি না সরানো হয় তাহলে প্রথমে উকিল নোটিস দেয়া হবে। এরপরেও যদি এই সংক্রান্ত ভিডিও তার (ডা. জাহাঙ্গীর) পেজে থাকে তাহলে মামলা করা হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 9 =

Back to top button