Breakingখেলাধুলা

কেবল একটি সেঞ্চুরিই নয়

বিশ্বকাপে সে চলে না, তার শরীর ভারী হয়ে গেছে, ক্ষিপ্রতা নেই, চোখের রিফ্লেক্স কমে গেছে, স্ট্রাইক রেট ভালো না, আরও কতো কী? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দেয়ার পায়তারা চলার সময় এসবই শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশ দলের নীতি নির্ধারক, কর্মকর্তা, কুশীলবদের কাছে। এক পর্যায়ে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল, মাহমুদউল্লাহর বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না। আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ও এশিয়া কাপে মাহমুদুল্লাহকে ছাড়াই খেলতে যায় বাংলাদেশ।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যে অন্য ধাতুতে গড়া। হাল ছাড়লেন না তিনি। ‘সাইলেন্ট কিলার’ খ্যাত মাহমুদউল্লাহ কঠোর অনুশীলনে ধরে রাখলেন ফিটনেস আর অপেক্ষায় রইলেন সুযোগের। সুযোগটা এলো ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। প্রায় ৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই দুই ম্যাচে হাঁকালেন যথাক্রমে ৪৯ ও ২১ রান। এতে বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহকে নিতে বাধ্য হলো থিঙ্ক ট্যাংক। আর বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে আরও একবার ব্যাট হাতে নিজের জাত চেনালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে অনবদ্য শতক হাঁকান তিনি। মুম্বইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যদিও ১৪৯ রানের বড় হার দেখে বাংলাদেশ। আসরে এটি বাংলাদেশের টানা চতুর্থ হার। একবারে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল সাকিবের দল।

ভারতে বিশ্বকাপের শুরুতেও মাহমদুল্লাহর প্রতি বিরূপ আচরণ। আসরে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে ক্রিকেট খেলে জয় পেলো বাংলাদেশ। এতে মনে হয় অতি-আত্মবিশ্বাস তৈরির সঙ্গে অযাচিত স্পর্ধাও বেড়ে গেল বাংলাদেশ দলের নীতি নির্ধারকদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি মাহমুদুল্লাহ। তবে একটি ক্যাচ নেয়ার পর ক্ষীপ্র ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষের এক ব্যাটসম্যানকে রানআউট করেন মাহমুদুল্লাহ। হিমাচলের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয়ে ফুরফুরেই ছিল দল। কিন্তু দলের থিংক ট্যাংক দেখালো মাতব্বরি।

একই মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে একজন স্পিনার বাড়িয়ে একাদশ থেকে ছেঁটে ফেলা হলো মাহমুদউল্লাহকে। যদিও উল্টো চিত্র ছিল প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড দলে। স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলীর বদলে একজন পেসার নেয় তারা। ওই ম্যাচে ৩৬৪ রান তাড়া করে সাকিবের দল অলআউট হয় ২২৯ রানে। ১৩৭ রানের বড় হারে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচেই একাদশে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ফিফটিও পেতে পারতেন তিনি।

কিন্তু চল্লিশের ঘরে গিয়ে থেমে যাচ্ছিলেন। টানা দুই ম্যাচে খেলেন ৪১* ও ৪৬ রানের ইনিংস। কিন্তু টানা হারে দলের আত্মবিশ্বাস ঠেকে তলানিতে। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে আরও বড় লজ্জা পেতো পারতো বাংলাদেশ দল। তবে দলের বাকিদের ঠুনকো ব্যাটিংয়ের মাঝে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদউল্লাহ দেখালেন চওড়া ব্যাট। ১১১ বলে করেন কাঁটায় কাঁটায় ১১১ রান। দুর্দান্ত ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ হাঁকান ১১টি চার ও চারটি ছক্কা। বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া তার শতকটি ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশেরও প্রথম। ২২৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি মাহমুদউল্লাহর চতুর্থ সেঞ্চুরি। চারটিই আইসিসি টুর্নামেন্টে। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান করেন তিনি।

এবারের বিশ্বকাপে ক্ষিপ্র ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে তিনটি ক্যাচও নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কেবল তাসকিন, তানজিদ ও মুশফিকের তিনটি করে ক্যাচ রয়েছে। গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বলেন, অনেক কিছু বলতে চাই, সময় হলে বলবো।

মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘যা সময় কেটেছে ভালো কেটেছে, কিছু বলতে চাইছি না। যদিও অনেক কিছু নিয়ে বলতে চাই। কিন্তু এটা সঠিক সময় না। আমার লক্ষ্য ছিল শুধুই দলের জন্য খেলা, অবদান রাখা। আমার ক্যারিয়ার জুড়েই আমি অনেক আপস অ্যান্ড ডাউন দেখেছি। ইটস ফাইন।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + seven =

Back to top button