জাতীয়

কে কত গাছ লাগাল, তা আমি দেখতে চাইঃ শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষায় দেশবাসীকে বেশি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার দলের কে কত গাছ লাগাল, তা তিনি দেখতে চান।

বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে সোমবার বিকালে একথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বাংলাদেশে আমাদের বৃক্ষরোপণ করতে হবে। আমাদের যেখানে যত নেতা-কর্মী আছে আমাদের মূল দল আওয়ামী লীগের সাথে সাথে সকল সহযোগী সংগঠন প্রত্যেক সংগঠনের প্রতিটি সদস্য তিনটি করে গাছ লাগাবে। সেটা তার নিজের জায়গায় হোক, রাস্তার পাশে হলেও হোক।”

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানেও বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী; করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যে কর্মসূচি এখনও শুরু করা যায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, “অন্তত ১ কোটি গাছ আমরা লাগাবোই। একটা অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেও এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিটা আমরা নিলাম।এখানে শুধু উদ্বোধন করলেই হবে না। কে কত গাছ লাগাল, এবার সেটাও দেখতে চাই।”

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ লাগানোর পর তার যত্ন নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

“গাছ লাগালেই হবে না। গাছের কিন্তু পরিচর্যা করতে হবে। নিজের সন্তানকে যেমন লালন-পালন করতে হয়, একটা গাছ লাগালে তাকেও কিন্তু যত্ন করতে হবে। তাহলে সে ফল দেবে। আমি ফল খাব, যত্ন করব না, এটা তো হয় না।”

উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সবুজ বেষ্টনি তৈরির জন্য নারকেল,ঝাউ, খেজুর,তাল গাছ রোপণের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ফলের গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কৃষি গবেষণায় আওয়ামী লীগই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কষি গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই দেখে সেখানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

করোনাভাইরাস সঙ্কটে সরকারের দেওয়া ১৯ প্রকারের প্রণোদনা প্যাকেজের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে কৃষির জন্য আমরা আলাদাভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।

“আমাদের কৃষকরা মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। তাদের আমরা কষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকির টাকাটা তাদের হাতে সরাসরি চলে যায়। এবারও আমরা ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুধু কৃষি ভর্তুকির জন্য আলাদা করে রেখেছি। কারণ পেটে খেলে পিঠে সয়।”

করোনাভাইরাস মহামারীতে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা বলেন সরকার প্রধান।

“এবার বাজেটে আপনারা দেখেছেন, শুধু কৃষির জন্য আমরা বিশেষভাবে বরাদ্দ রেখেছি। ২২ শতাংশ বরাদ্দ শুধু এই কৃষিখাতে আমরা রেখে দিয়েছি।”

কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “কৃষি যান্ত্রিকীকরণটাকে আমরা আরও উৎসাহিত করতে চাই। বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসব না। আমাদের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি আছে, ডিজেল প্ল্যান্ট আছে, সেখানেও কিন্ত আমরা এই কৃষি য়ন্ত্রগুলো এ্যাসেম্বল করতে পারি। কিছু পার্ট এখানে তৈরি করতে পারি।

“এজন্য গবেষণা করে করে কোন ধরনের কী দরকার, সেটা বের করা আমাদের প্রয়োজন।এজন্য এবার আমরা ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা কিন্তু বরাদ্দ রেখেছি কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য।”

শেখ হাসিনা বলেন, “পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমরা চাচ্ছি আমাদেরও প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত,উন্নত একটা প্রযুক্তির ব্যবহার। তাহলে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর আমাদের আর যেন কখনও খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে না হয় বা দেশের মানুষ যেন খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায়।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধরী ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য রাখেন।

কৃষিবিদ রাজ্জাক পহেলা আষাঢ় প্রতি বছর গাছ লাগানোর কর্মসূচি নিয়ে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কথা বলেন।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, “এই বৃক্ষরোপণ দিবস ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হলেও এই কর্মসূচি খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাছাড়া গাছ আছে বলেই আম্পান থেকে বাংলাদেশের রক্ষা হয়েছে।”

ভিডিও কনফারেন্সের অন্য প্রান্তে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে যুক্ত হন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − seven =

Back to top button