আন্তর্জাতিককরোনাভাইরাস

কোনো কোনো দেশে লকডাউন শিথিল হিতে বিপরীত হয়েছে

করোনাভাইরাসের মহামারির বিস্তার কমার লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই লকডাউন শিথিল করতে শুরু করেছে অনেক দেশ। কোনো কোনো দেশে অবশ্য এতে হিতে বিপরীতও হচ্ছে। নতুন করে আবারও কড়াকড়ি আরোপের পথে হাঁটতে হচ্ছে কোনো কোনো দেশকে।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ২৭ লাখ।

সিএনএন জানায়, সংক্রমণ কমে আসায় লকডাউন শিথিল করে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর গত শুক্রবার আবার পাঁচ শতাধিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী সিউল ও এর আশপাশের এলাকায় করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, সিউল মেট্রোপলিটন এলাকায় সরকার পরিচালিত সব উদ্যান, শিল্প প্রদর্শনী, জাদুঘর ও থিয়েটারও আগামী দুই সপ্তাহের জন্য আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট ক্যাফেও আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৪১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল শনাক্ত হয়েছেন ৩৯ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৩৯৮ জন করোনা সংক্রমিত রোগী। মারা গেছেন ২৬৯ জন।

জার্মানিতেও লকডাউন শিথিলের কয়েক দিনের মধ্যেই সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এরপর আবারও কিছু জায়গায় কড়াকড়ি আরোপ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে শুক্রবার শনাক্ত হয়েছেন ৫৬৭ জন রোগী। করোনায় এ দিন মারা গেছেন ২৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মারা গেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি করোনা রোগী।

স্পেনেও মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার আভাস পেয়ে জনজীবন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এখন দেশটিতে আবারও নতুন রোগী বাড়ার দৈনিক হার বাড়ছে। দেশটিতে শুক্রবার ৬৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার শনাক্ত হন ১ হাজার ১৩৭ জন। দেশটিতে মোটের ওপর ২ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৭ হাজারের বেশি।

জাপান প্রথম দিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার বিধিনিষেধই আরোপ করেনি। এরপরও দেশটি মহামারি প্রায় সামাল দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আবারও রোগী বাড়তে শুরু করলে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে। এরপর দেশটিতে করোনার সংক্রমণ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আসার আভাস পাওয়া গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে অঞ্চল ধরে ধরে জরুরি অবস্থা তুলে নিতে শুরু করে সরকার। জাপানে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮৭৪ জন। শুক্রবার দেশটিতে ৩৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাতজন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও করোনার সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশটিতে শুক্রবারও ১ হাজার ২১২ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ১ লাখ ৫ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ দিন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গতকাল ১৮ লাখ ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতির জন্য সমালোচকেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন। দেশটিতে বিধিনিষেধ সেভাবে কার্যমকরই করেনি কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই পরিস্থিতি ব্রাজিলেরও। এই দেশটির প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোও লকডাউনের বিপক্ষে। এমনকি জনগণকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়ায় এক মন্ত্রীকেও বরখাস্ত করেছেন তিনি। ব্রাজিল এখন শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। এই দেশটিতে রোগী এখন পৌনে পাঁচ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজারের বেশি করোনা রোগীর।

লকডাউন শিথিলের পর রোগী ও করোনায় মৃত্যু বাড়ছে প্রতিবেশী ভারতেরও। শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নবম। গতকাল রাত পর্যন্ত ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজারের বেশি। মৃত্যু পাঁচ হাজার ১৮৫ জন। এই পরিস্থিতির মধ্যে ভারত লকডাউনের মেয়াদ পঞ্চম দফায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তবে রাত্রিকালীন কারফিউয়ের সময়সীমা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া ৮ জুন থেকে উপাসনালয়, শপিংমল, রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব, ইরানসহ আরও কিছু দেশে লকডাউন শিথিলের পর রোগী বাড়ায় আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে ৮৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনাক্ত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। এ দিন মারা গেছেন ২২ জন। মোটের ওপর দেশটিতে মারা গেছেন ৪৮০ জন করোনা সংক্রমিত রোগী। আর ইরানে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৭ হাজার ৭৩৪ জন। গতকালও দেশটিতে ২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫৭ জন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 10 =

Back to top button