Breakingধর্ম ও জীবন

কোরবানি ও আকিকা একসঙ্গে দেওয়া যাবে কি?

কোরবানির পশুতে কেউ কেউ নিজেদের সন্তানের আকিকার অংশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কেউ জানা না থাকার কারণে জিজ্ঞেস করেন- এভাবে আকিকার অংশ দেওয়া জায়েজ হবে?

তাদের প্রশ্নের উত্তর হলো- হ্যাঁ, কোরবানির পশুর অংশে সন্তানের আকিকা দেওয়া যায়। কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া যায়। এতে কোরবানি ও আকিকা দুইটিই হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬)

কোরবানির পশুতে আকিকার দুইটি মাসআলা

• শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনান : ১৭/১২৬)

• ফাতাওয়া শামিসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সাথে আকিকা শুদ্ধ। (রাদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)

কোন পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে?

প্রসঙ্গত, জেনে রাখা উচিত যে কোরবানির কোন পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে। তাহলে কাউকে শরিক করতে চাইলে বিষয়টি সহজ হয়ে আসবে।

• প্রথমত কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৭)

আরও পড়ুন : কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায়?

• উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ি: ৪/২০৭)

কোনো অংশীদারের নিয়ত গলদ হলে

• অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি তাকে কেউ অংশীদার বানালে, তাদের (অংশীদারদের) কোরবানিও শুদ্ধ হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৮; কাজিখান : ৩/৩৪৯)

আকিকা কখন ও কীভাবে দিতে হয়?

প্রসঙ্গত সন্তান জন্মের পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশে জন্মের সপ্তম দিনে পশু জবাই করাকে আকিকা বলে। আকিকা করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে আকিকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুইটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯৬১)

অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)
সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। এক হাদিসে সপ্তম দিনে আকিকা করার কথা বলা হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৫২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর আকিকা সপ্তম দিনে করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৮৩৪)

তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)
অবশ্য একুশ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তীতেও তা আদায় করা যাবে।

সন্তানের আকিকা করার দায়িত্ব তার পিতার। অবশ্য অন্য কেউ বা নিজেও নিজের আকিকা করা জায়েজ আছে।

আকিকার গোশত সন্তানের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন সবাই খেতে পারবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) বলেন, আমি আতা (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, …আকিকার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে…। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি সদকা করে দিতে হবে? তিনি বললেন, না, তুমি চাইলে খেতে পারো এবং হাদিয়াও দিতে পারো…। ’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৯৬৯; ফাতহুল বারি: ৯/৫০৭; ফাতাওয়া বাজ্জাযিয়া: ৩/৩৭০; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬; আলমাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত: ৩০/২৭৬; তুহফাতুল মাওদুদ বিআহকামিল মাওলুদ: ৭৮)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =

Back to top button