Lead Newsআইন ও বিচার

ক্যাসিনো খালেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

মানিলন্ডারিং মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার নিম্ন আদালতে এই চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। সিআইডির মুখপাত্র ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চার্জশিটে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, তার ভাই মাসুদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও হাসান মাহমুদ ভূঁইয়া, খালেদের ম্যানেজার হারুন রশিদ, শাহাদৎ হোসেন উজ্জ্বল ও মোহাম্মদ উল্ল্যাহ খানের নাম উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজির প্রমাণ পাওয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে।

ক্যাসিনো মামলায় সিআইডি তদন্তাধীন এটিই হবে প্রথম চার্জশিট। খালেদ ছাড়াও ক্যাসিনো বস ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, টেন্ডার কিং জি কে শামীম ও কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবসহ একাধিক অর্থ পাচার মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী ঝটিকা অভিযানের প্রথম শিকার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অস্ত্র ও মাদকসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে একে একে ৫টি মামলা করা হয়।

সিআইডি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক সাইনবোর্ড কাজে লাগিয়ে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামান। কিন্তু এ টাকা এখন তার গলার কাঁটা।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে খালেদ অভিনব কৌশল বেছে নেন। তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের সময় বিপুল পরিমাণ ডলার সঙ্গে নিয়ে যান। এসব দেশে ঘন ঘন যাতায়াত করলেও তার পাসপোর্টে বিদেশি মুদ্রার কোনো এনডোর্সমেন্ট নেই।

পাচারকৃত টাকায় তিনি মালয়েশিয়ায় আরএইবি ব্যাংকের জহুরবারু শাখায় ৩ লাখ রিঙ্গিত এফডিআর করেন। এছাড়া সিঙ্গাপুরের পূর্ব জুরাং এলাকায় ছেলে অর্পণের নামে কোম্পানিও খোলেন। সিঙ্গাপুরে খালেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম অর্পণ ট্রেড পিটিই।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও খালেদ বিপুল অংকের টাকা নিয়ে যান। ব্যাংককের একাধিক ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখা হয়। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ থাই মুদ্রার সন্ধান পায় সিআইডি।

থাইল্যান্ডের আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের বিপরীতে ডেবিট কার্ড নেন খালেদ। র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত ডেবিট কার্ডগুলোর তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা করছে সিআইডি। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর ছাড়াও খালেদ মালয়েশিয়ায় টাকা পাচার করেন।

মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পেও তার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। সেকেন্ড হোম প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ায় বিশেষ দীর্ঘমেয়াদি ভিসা সুবিধা নেন।

খালেদের পাসপোর্টের (পাসপোর্ট নম্বর ইগ ০২৮৯২৮১) ৩১ নম্বর পৃষ্ঠায় সেকেন্ড হোমসংক্রান্ত ভিসা স্টিকার রয়েছে (ভিসা নম্বর চঊ ০৫১১১৬৪)।

সিআইডি বলছে, খালেদের গোপন সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিলেন তার কর্মচারী মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি ছিলেন খালেদের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠভাজন। মোহাম্মদ উল্লাহ ২০১২ সাল থেকে খালেদের মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপার লিমিটেড, মেসার্স অর্পণ প্রপার্টিজ এবং অর্ক বিল্ডার্সের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। গ্রেফতারের পর মোহাম্মদ উল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি খালেদের অর্থ পাচারের আদ্যোপান্ত খুলে বলেন।

সূত্র জানায়, খালেদের অস্ত্রধারী ক্যাডারের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। তিনি নিজেও মতিঝিল এলাকায় কিলার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেক র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা পড়লে খালেদের উত্থান শুরু হয়।

রাজধানীর বনানীতে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার আশীর্বাদে মাত্র ২ বছরের মাথায় খালেদ যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

অথচ ছাত্রদলের রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। বিদেশে পলাতক একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল ওপেন সিক্রেট। যুবলীগ নেতাদের কাছে ল্যাংড়া খালেদ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

ফকিরাপুলের ঐতিহ্যবাহী ইয়ংমেনস ক্লাবে তিনি বিশাল ক্যাসিনো গড়ে তোলেন। ক্যাসিনো সম্রাট হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 − one =

Back to top button