গতিসীমা তদারকি, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠনে গুরুত্বারোপ
সড়কে নির্ধারিত গতিসীমা মেনে গাড়ি না চালানো ও নিয়মের বাইরে গিয়ে বিপদজনকভাবে ওভারটেক করা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। তাই চলাচলকারী পরিবহনের গতিসীমা তদারকি ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা একটি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ বা মনিটরিং সেল গঠন প্রয়োজন, যেখান থেকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে ব্যক্তি পরিচয়ের উর্ধে উঠে সবার জন্য সমানভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে।
এছাড়া দেশের বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর অসঙ্গতিগুলো দূর করে অস্পষ্ট বিষয়গুলোর স্পষ্টীকরণ ও নির্দিষ্টকরণ প্রয়োজন। যেমন আইনে আছে হেলমেটের বাধ্যবাধকতার কথা, কিন্তু হেলমেটের স্ট্যান্ডার্ড কেমন হতে হবে সেবিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই হেলমেটের মান নির্ধারণ ও প্রাতিষ্ঠিকীকরণ এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫,০০০ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, পঙ্গুত্ত্ববরন করে আরো অনেক বেশিসংখ্যক। এছাড়া বিশ্বে প্রতিবছর সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্টাটাস রিপোর্ট অব রোড সেইফটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে। উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। তাই নিরাপদ সড়ক জোরদারে সড়ক আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে রোববার ঢাকায় আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্যখাত আয়োজিত ‘নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায়। এতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেইফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি তাঁর প্রবন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ টি রিস্ক ফ্যাক্টর তুলে ধরেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। এছাড়াও বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর অসঙ্গতিগুলো, সেসব দূরীকরণে সুপারিশসমুহ এবং বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
এ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশ কান্ট্রি কো–অডিনেটর ড. মো. শরীফুল আলম, গ্লোবাল রোড সেইফটি এডভোকেসি ও গ্রান্টস প্রোগাম ম্যানেজার তাইফুর রহমান, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান।
ড. শরীফুল আলম বলেন, “বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে – যেগুলোকে সামান্য গুরুত্ব দিলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব এবং বাস্তবায়ন করাও সম্ভব।”
তাইফুর রহমান বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। একটি ভালো আইন ও তার প্রয়োগ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।”
মাশহুদুল হক বলেন, “আইনের গ্যাপগুলো যেমন সংশোধন প্রয়োজন, তেমনি আইন বাস্তবায়ন করাও দরকার। গণমাধ্যম জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে সামনের সারি থেকে।”
এছাড়া সভায় দৈনিক আমাদের সময়, যায় য়ায় দিন, বাংলাদেশ টুডে, সাম্প্রতিক দেশকাল, ইউনাইটেড নিউজ ডট কম, ডেইলি সান, মানবকণ্ঠ ও পজিটিভনিউজ ডটকম ডটবিডিসহ বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের উল্লেখজনক সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।