Breakingআন্তর্জাতিক

গাজায় ফের হামলা চালায়েছি দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

জ্বালানী গ্যাস ও বিস্ফোরক সম্বলিত বেলুন (ইনসেনডিয়ারি বেলুন) বা বেলুন বোমা ছোঁড়ার অভিযোগে গাজা ভূখণ্ডে ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সোমবার দিবাগত রাতে ভূখণ্ডের মূল শহর গাজা সিটি ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

হামলায় এখন পর্যন্ত কারো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েল এবং তার নাগরিকদের সুরক্ষায় সেনাবাহিনী সবসময় তৎপর আছে। অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের জনগণ যে কোনো মূল্যে তাদের অধিকার রক্ষা করবে।

ইনসেনডিয়ারি বেলুনকে অনেকে বেলুন বোমা বলে উল্লেখ করে থাকেন। হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম জাতীয় হালকা গ্যাসে ভর্তি এই বেলুনগুলোতে বিশেষভাবে যুক্ত করা থাকে বিস্ফোরক উপাাদন অথবা মোলোটভ ককটেল (পেট্রোল/ গ্যাসোলিন বোমা)।

বিশেষ এই বিস্ফোরক বেলুন ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম। ১৮৪৯ সালে প্রথম ভেনিসের বিরুদ্ধে এই অস্ত্রের প্রয়োগ করেছিল অস্ট্রিয়া। গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস এই অস্ত্র ব্যবহার করছে ২০১৮ সাল থেকে।

সোমবার মধ্যরাতের হামলার বিষয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস থেকে দক্ষিণ ইসরায়েলের গ্রামীন এলাকা ও কৃষিক্ষেত্রগুলোকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু বেলুন বোমা উড়িয়েছে হামাস। এর জেরে গাজার প্রধান শহর গাজা সিটি ও খান ইউনুসে হামাসের ঘাঁটি এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে বিমানবাহিনী।

ইসরায়েলের অগ্নিনির্বাপক (ফায়ার সার্ভিস) বাহিনীর কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, হামাসের ওড়ানো বেলুন বোমায় ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের কয়েকটি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নাশকতা ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গাজা সিটি ও খান ইউনিসে শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। গাজার ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে ইসরায়েল ও তার নাগরিকদের রক্ষা করতে সেনাবাহিনী সবসময়ই প্রস্তুত আছে।’

এদিকে,হামাসের এক মুখপাত্র সোমবার রাতের হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস ও ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের অধিকার ও পবিত্র এলাকা (জেরুজালেম) রক্ষায় তীব্র লড়াই ও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’

গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতকার (সেটলার)-দের তৎপরতা বিরুদ্ধে গত বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল ভূখণ্ডের বিভিন্ন শহর, ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। গত ৯ মে শবে কদরের রাতে জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায়ের পর মধ্যরাতে বিক্ষোভ শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা।

এ সময় ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। পরিস্থিতি শান্ত করতে আল আকসা মসজিদ চত্বরে সাধারণ জনগনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এর জেরে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপণাকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। জবাবে হামাসে টানা বিমান হামলা ও আর্টিলারি শেল ছোড়া শুরু করে ইসরায়েল সেনাবাহিনী।

শুর ‍হয় দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ। ১১ দিন ধরে গাজায় বিপুল পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের প্রচেষ্টায় গত ২১ মে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ইসরায়েল সরকার ও হামাস।

এগার দিনের যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে এই যুদ্ধে হামাসের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১২ জন।

সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা এখনও সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি গাজা; যুদ্ধবিরতির চুক্তির সময় এখনও এক মাসও পেরোয়নি; অথচ এর মধ্যেই ফের যুদ্ধে জড়াল হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =

Back to top button