Breakingতথ্যপ্রযুক্তি

গুগলে সফল বাংলাদেশি শাম্মী কুদ্দুস

ফিন্যানশিয়াল টেকনোলজি নিয়ে তাঁর কাজ প্রশংসিত

টেক জায়ান্ট গুগলে কাজ করার সুযোগ পাওয়া অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। সেটিকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়ে শাম্মী কুদ্দুস।

গুগলের পণ্য ব্যবস্থাপক এবং বাংলাদেশের প্রথম লিডারশিপ প্রতিষ্ঠান বিওয়াইএলসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাম্মী কুদ্দুসের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। দুই সন্তানের জননী এই নারী ইতিমধ্যে স্ট্যানফোর্ড জিএসবি ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে যথাক্রমে এমবিএ এবং এমপেইড ডিগ্রি লাভ করেন।

স্যাট পরীক্ষায় ভালো করার কারণে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান তিনি এবং এমআইটি থেকে পরিবেশ প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভেলে থাকেন। সেখানে তিনি গুগলের পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। অদম্য এই তরুণী এখন অনেক নারীর জন্যই অনুপ্রেরণা।

শাম্মী গুগলে প্রথমে কাস্টমার ইনসাইটস ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিমে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান। গুগলের মনিটাইজেশন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে থাকে পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিম। এই টিমের মাধ্যমেই কাস্টমারের কাছে গুগলের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে।

সারা বিশ্বে গুগলের প্রডাক্ট-ইউটিউব, ম্যাপস, অ্যাডস, প্লে স্টোর, অ্যাডসেন্স প্রভৃতির ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজ করে থাকে এই প্রডাক্ট টিম। ফিন্যানশিয়াল টেকনোলজি বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ থাকায় এই টিমের সঙ্গে কাজ করে দারুণ উপভোগ করছেন শাম্মী। গুগলে ফিন্যানশিয়াল টেকনোলজি নিয়ে তাঁর কাজ বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

২০১১ সালে দেশে ফিরে স্বামী ইজাজ আহমেদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার। এই সেন্টার তরুণদের শিক্ষাক্ষেত্রে নানা রকম সহযোগিতা করে থাকে। শাম্মী কুদ্দুস ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের মা। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভেলে থাকেন। সেখানেই তিনি টেক জায়ান্ট গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
শাম্মী কুদ্দুস বলেন, মা-বাবা দুজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ায় আমার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামেই।

স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। তবে মা-বাবা আমাকে কখনই ভালো ফলাফলের জন্য কোনো চাপ দেননি। তারা সব সময় সাহস জুগিয়েছেন। গ্রেড অর্জনের চাপের জন্য নয়, বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছি।

শাম্মী বলেন, মা ছিলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, তাই গণিত ও বিজ্ঞান শেখার হাতেখড়ি তার হাত ধরেই। খাওয়ার টেবিলে আলোচনা চলত নিউটনের পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব নিয়ে। ‘তুমি কি জানো তোমার ওজন থাকার পরেও চেয়ারটা কেন ভেঙে পড়ছে না?’ এ জাতীয় প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে মা বিজ্ঞানকে আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছিলেন। অন্যদিকে বাবা ছিলেন বইপ্রেমী। দুই সপ্তাহ পর পর আমাকে ব্রিটিশ কাউন্সিলে নিয়ে যেতেন বই আনার জন্য। আমার মনে আছে, দুই সপ্তাহের জন্য আমি চারটা বই আনতে পারতাম।

চট্টগ্রামে বই কোলে নিয়ে বাবার সঙ্গে রিকশায় ঘুরে বেড়ানো সেই বিকালগুলো আমার কাছে এখনো সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি। মূলত মা-বাবা আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রত্যয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, যেন নিজের মতো করে বড় হতে পারি।

তিনি বলেন, মোটামুটি রেজাল্ট নিয়েও ছেলেদের বিদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হলেও মেয়েদের কথা চিন্তাও করা হচ্ছে না। কারণ সবাই বিশ্বাস করত, একজন অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের বিদেশে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমাকে পরিবারের কেউ এমন ধরাবাঁধা নিয়ম বেঁধে দেয়নি। সেজন্য আমি মার্শাল আর্ট শেখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা, ভ্রমণ করা এবং গতানুগতিক পেশা বেছে না নেওয়ার মতো কাজগুলো করতে পেরেছি।

হাইস্কুলে থাকতে আমি স্যাট ওয়ান ও টু পরীক্ষা দেই এবং আমেরিকার ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম তখন স্কলারশিপের জন্য। এদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্কলারশিপ পেয়েছিলাম।

এরপর এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তখন ডায়াল-আপ ইন্টারনেটের সাহায্যে অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে অনেক সময় লাগত। এমআইটির একজন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট হওয়া আমার জীবনকে সব দিক থেকেই বদলে দিয়েছে।

সবাই এমআইটির কড়া ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রমের কথা জানে, কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও অসাধারণ জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেয়েছি।

এমআইটি থেকে পরিবেশ প্রকৌশলে বিএসসি শেষ করার পর শাম্মী প্রথমে কাজ করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম-এ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ২০১১ সালে ওয়াটারহেলথ ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ টিমে কাজ করেন তিনি। সে সময় ওই টিম চট্টগ্রামে পানির সুবিধা নিয়ে কাজ করেছিল।

স্ট্যানফোর্ড জিএসবি ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে এমবিএ ও এমপেইড ডিগ্রি গ্রহণের পরে গুগলে যোগ দেন তিনি। যেখানে বর্তমানে তাদের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিমের পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের এই দলটি গুগলের সব নগদীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে।

শাম্মী বলেন, ‘গুগলকে অর্থ দিলে বা গুগল কাউকে দিলে, সেসব আমাদের হাত দিয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ যে ইউটিউব, ম্যাপস, অ্যাডওয়ার্ডস, প্লে ইত্যাদি গুগল পণ্য ব্যবহার করে, সেসব নিয়েই আমাদের কাজ। স্টার্ট আপে কয়েক শ ব্যবহারকারীর জন্য কাজ করা থেকে গুগলের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর জন্য কাজ করা এক শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 8 =

Back to top button