যাকাত আদায়ের উৎকৃষ্ট সময় রমজান
ইসলামের পাঁচটি খুঁটির অন্যতম একটি জাকাত । কারণ জাকাত ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। আবার এই জাকাতের মাধ্যমেই আল্লাহ সম্পদকে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা দান করেন। সম্পদের বরকত ও পরিশুদ্ধতা অর্জনের জন্য ও অধিক পরিমান নেকি পাওয়ার জন্য জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম মাস রমজান।
মুসলমানদের মধ্যে কেউ আল্লাহর বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সম্পদের মালিক হলেই তাকে জাকাত আদায় করতে হবে। সম্পদের পবিত্রতা পরিশুদ্ধতা এবং বৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে আল্লাহ মুসলমানদের উপর জাকাত আবশ্যক করেছেন। রমজানে জাকাত দিলে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই উপকৃত হয়।
রমজানে জাকাত আদায়
গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে জাকাত দেওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় না থাকলেও রমজানই জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম সময়। আর ফেতরা ঈদুল ফিতরের আগে রমজানের মধ্যে দেওয়ার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। কারণ এ সময় যে কোনো দান-সাদকাই অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। এ জন্যই অধিকাংশ ধনী ও সম্পদশালীরা রমজানে দান-সাদকা, জাকাত-ফেতরা আদায়ে উদ্যোগী হয়ে থাকেন।
রমজানে মানুষের কাজের পরিধি কমে যায়। দুর্বলতা ও কষ্টের কারণে অভাবি, গরিব-দুঃখী মানুষ সবসময় আয়-রোজগারে যেতে পারেন না। তাই রমজানে ধনীদের জাকাত-ফেতরা তথা আর্থিক দান-অনুদান গরিবদের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন ও জীবন যাত্রার জন্য সহায়ক হয়।
জাকাত আদায়ের উপকারিতা
একদিকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্তম্ভ- জাকাত, সহায়-সম্বলহীন মানুষকে সবল ও স্বচ্ছল করে তোলে অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করে দেয়। অভাবি মানুষগুলো একটু স্বস্থি পায়।
অন্যদিকে জাকাত আদায়কারীরা ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়ার আশায় রমজানে দান-সদকা ও জাকাত- ফেতরা আদায়ে উৎসাহিত হয়। অন্যসময়ে আদায়ের তুলনায় রমজানে অধিক নেকি অর্জন হয় বিধায় আল্লাহর বিধান পালনের এক পরিপূর্ণ তৃপ্তি আসে।
রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে যে কোনো নফল ইবাদতের বিনিময় ফরজ ইবাদত আদায়ের মতো। আর তা জাকাত, ফেতরা ও দান-অনুদানের সাওয়াবের বেলায়ও ঘটে।
জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-
* জাকাত ধনীর সম্পদকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ করে তা বাড়িয়ে দেয়। ইসলামি শরিয়তে মানুষের প্রয়োজন পূরণের পর যদি নেসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ একবছর কারো কাছে জমা থাকে তবে তাকে ওই জমাকৃত সম্পদের জাকাত আদায় করতে হয়।
* কুরআনে ঘোষিত নির্ধারিত ৮ খাতেই জাকাতের অর্থ বণ্টন করতে হবে। আল্লাহ বলেন- ‘সাদাকাহ (জাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তআকর্ষণ করা হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। (সুরা তওবাহ : আয়াত ৬০)
* সারাবিশ্বে প্রায় দেড় বছর ধরে চলা মহামারি করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতা ও চিকিৎসাসহ এ দুঃসময়ে অভাবগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও দেওয়া যেতে পারে জাকাতের অর্থ। কিংবা নিজ উদ্যোগে স্বীয় জাকাতের অর্থের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার ব্যাপারেও মতামত দিয়েছেন বিশ্বের অনেক ইসলামি চিন্তাবিদগণ।
* রমজানে জাকাত আদায়ই হোক ধনী-গরিব পরস্পরের মধ্যে ইসলামের সেতু বন্ধন। যেবন্ধনের কথা বলেছেন বিশ্বনবি-
‘জাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন।’ (মুসলিম)
* রমজানের সব ইবাদতই আল্লাহ দেখেন এবং এর নেয়ামতও দান করেন। সাওয়াব দেন ৭০ গুণ বেশি। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার জাকাত প্রদানে অনুগ্রহ দানের ঘোষণা দিয়েছেন একাধিক আয়াতে। আল্লাহ বলেন-
‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য আগে পাঠবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১১০)
‘তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সুরা নুর : আয়াত ৫৬)
’আর যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেবো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৬২)
সুতরাং প্রত্যেক ধনী ও সম্পদশালীর উচিত, জাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত রমজানের বরকতময় সময়ে যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের ঘোষণায় নেয়ামত, বরকত, অনুগ্রহ ও মহাপুরস্কার লাভের চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির সম্পদশালী ও ধনীদেরকে রমজানে জাকাত আদায় করে অধিক সাওয়াব ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।