Breakingশিল্প ও বাণিজ্য

টাকা তোলার চাপ শামাল দিতে পারছেনা ইসলামী ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চায় বিশেষ ধার

বড় ব্যাংক হওয়ায় নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেশি। তাই গ্রাহকদের অতিরিক্ত নগদ টাকা উত্তোলনের কারণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে—এমন যুক্তি দেখিয়ে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ বিবেচনায় ৮ হাজার কোটি টাকা ধার চেয়েছে। বিভিন্ন খাতের সরকারি কোষাগার থেকে প্রাপ্য ভর্তুকি ও পাওনার বিপরীতে এই তারল্য সহায়তা চেয়েছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি ভর্তুকির বিপরীতে এখনো ইসলামী ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে সুকুক জমা দিয়ে ব্যাংকটি তারল্য সহায়তা নিতে পারছে।’

বিশেষ বিবেচনায় তারল্য সুবিধা পাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি লেখেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। চিঠিতে তিনি বলেন, দেশে বিরাজমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমায় ব্যাংক থেকে তাঁদের নগদ টাকা উত্তোলনের চাহিদা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে।

ফলে ব্যাংক খাতে নগদপ্রবাহে একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। সে জন্য এই খাতের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিধিবদ্ধ তারল্য সঞ্চিতি সংরক্ষণে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। তারপরও দেশের সবচেয়ে বড় আমানতের ব্যাংক হওয়ায় গ্রাহকের নগদ উত্তোলন চাহিদা পূরণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। শরিয়াহ্ ব্যাংক হওয়ায় পদ্ধতিগত কারণে ইসলামী ব্যাংক যেকোনো মাধ্যম থেকে নগদ অর্থ নিতে পারে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তা অব্যাহত রাখা একান্ত প্রয়োজন।

চিঠিতে কোন খাতে কী পরিমাণ ভর্তুকির টাকা পাওনা রয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রের আলোকে ব্যাংকটি ৭১ কোটি ২১ লাখ ডলারের ৪৫টি এলসি খুলেছে। এর বিপরীতে গ্রাহক ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার ৭৪ কোটি টাকা কৃষি মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। গ্রাহক টাকা পেলে তাদের এখানে সমন্বয় হবে। একইভাবে ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়নের বিপরীতে ব্যাংকটির পাওনা ৪০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। করোনা সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় ব্যাংকটি পাবে ১৪৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ভর্তুকির ৩৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পাবে তারা।

ইসলামী ব্যাংকের নানা অনিয়ম আলোচনায় এলে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে পড়ে। এখন অনিয়মের ঋণ আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্রাহকেরাও আগের চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তারল্য সহায়তা দেওয়া ছাড়া অনিয়ম রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা ব্যাংকটিকে আরও সংকটে ফেলে দিয়েছে।

এ নিয়ে ব্যাংকটির এমডি মুহাম্মদ মনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তাঁর জবাব পাওয়া যায়নি।

ইসলামী ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়লে শরিয়াহভিত্তিক আরও চার ব্যাংকও সংকটে পড়ে। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুকুক বন্ড জমা দিয়ে বিশেষ তারল্য সহায়তা চালু করে। এরপর কোনো বন্ড ছাড়াই গত বছরের শেষ দিনে হিসাব ভালো দেখাতে ব্যাংক পাঁচটিকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী আয় ও সিএমএসএমই খাতে ভর্তুকির টাকার বিপরীতে টাকা ধারের সুযোগ দেয় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে। এভাবে ব্যাংকগুলোকে সংকট থেকে উদ্ধারে এখন পর্যন্ত তিন ধরনের নীতিসুবিধা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 13 =

Back to top button