Lead Newsজাতীয়

ট্রাম্পের সুনজরে বাংলাদেশ ও ডঃ ইউনুস

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর সবচেয়ে বড় চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে!; ড. ইউনুসের অনন্য ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি!

দেশের ভেতরে-বাইরে অনেকেই বেশ কিছুদিন ধরে বলছিলেন- ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতায় আসার পর নাকি বাংলাদেশ ও ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে ঘোর অমানিশা। অথচ বাস্তবে ঘটলো উল্টো! ট্রাম্পের শপথ নেয়ার পর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক চুক্তিটি সম্পাদিত হলো বাংলাদেশের সঙ্গে। ষড়যন্ত্রকারীদের সব হিসেব-নিকেশ ওলট-পালট করে দেয়া যুগান্তকারী এ চুক্তিকে এখন অনেকেই বলছেন- ডঃ ইউনুসের আরেকটি ডিপ্লোম্যাটিক মাষ্টারস্ট্রোক, কেউবা বলছেন- তাঁর সফল ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির অনন্য উদাহরণ!

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে নন-বাইন্ডিং চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিষ্ঠানটি বছরে বাংলাদেশে ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল গ্যাস সরবরাহ করবে। আর্জেন্ট এলএনজি-সুত্রে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স। খবরটি নিশ্চিত করে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমরাই প্রথম দেশ, যারা কোনো ডিল সাইন করলাম। সে হিসেবে আমরা বলতে পারব বাংলাদেশ তার প্রথম পার্টনার।

রয়টার্স বলছে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস সরবরাহের সবচেয়ে বড় চুক্তি। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘোষণা দেন, দেশটিতে জ্বালানির অনুসন্ধান বাড়াবেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে আর্জেন্ট এলএনজির চুক্তি প্রমাণ করছে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এই খাত সংশ্লিষ্টদের আস্থা রয়েছে। আর্জেন্ট এলএনজি লুজিয়ানাতে ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পার এনুম (এমটিপিএ) অবকাঠামো তৈরি করছে, যা তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে অনেক শক্তিশালী করবে।

যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই, সেসব দেশে গ্যাস পাঠানোর ক্ষেত্রে মার্কিন জ্বালানি বিভাগ লাইসেন্স প্রদান স্থগিত করে রেখেছিল। তবে গত সোমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি রহিত করেন ট্রাম্প। কারণ তিনি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে চান। বর্তমানে বিশ্বের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা ২০২৮ সালের মধ্যে সরবরাহের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চায়।

লুজিয়ানার পোর্ট ফোরচনে আর্জেন্ট এলএনজির অবকাঠামো তৈরি সম্পন্ন হলে তারা বাংলাদেশের পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসের কার্গো বিক্রি করা শুরু করতে পারবে। বিডা তথা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী রয়টার্সকে বলেছেন, “এই চুক্তি শুধুমাত্র আমাদের বর্ধমান শিল্পের গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক শক্তিশালী করবে।”

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই জ্বালানি চাহিদার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে। এক্ষেত্রে তরলীকৃত গ্যাসের দিকে ঝুঁকছে সরকার। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্বব্যাপী যখন গ্যাসের দাম বেড়ে যায় তখন কম দামি কয়লার দিকে আবারও ঝোঁকা শুরু করে ঢাকা।

এ বিষয়ে বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ২৫ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৯টা ৪৬ মিনিটে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে তিনি লিখেছেন- বাংলাদেশ সরকার আজকে ট্রাম্পের নতুন এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে একটা ল্যান্ডমার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট সাইন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমরাই প্রথম দেশ কোনো ডিল সাইন করলাম। ট্রাম্পের ইলেকশন প্রমিজের মধ্যে ‘ড্রিল, বেবি ড্রিল’ এই স্লোগানটা বেশ পপুলার ছিল। সেটা এই এনার্জি এক্সপোর্টকে ঘিরেই।

ঐ স্ট্যাটাসে গ্যাস সংকটের কথা উল্লেখ করে আশিক চোধুরী লেখেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ, কর্মসংস্থান, ইত্যাদির জন্য আমাদের লং টার্ম গ্যাস সাপ্লাই সলিউশন বের করতেই হবে। মিডল ইস্টের বাইরে আমেরিকা একটা ইন্টারেস্টিং অলটারনেটিভ। ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির অ্যাঙ্গেল থেকে এই চুক্তি স্বাক্ষরের গুরুত্ব অন্য জায়গায় উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ট্রাম্প সরকারের স্টাইল খুবই ডিফারেন্ট। তারা জাত ব্যবসায়ী। আঁতেল টাইপের কথাবার্তায় নাই। স্ট্রেইট অ্যাকশন দেখতে চায়।

তিনি আরও লিখেছেন- লুইজিয়ানার সিনেটর বিল ক্যাসিডি সাইনিংয়ের কথা শুনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল! আগামী বছরগুলোতে আমরা যখনই বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে যাব, আমরা বলতে পারব যে বাংলাদেশ কিন্তু তার প্রথম পার্টনার ছিল। তার আমেরিকা ফার্স্ট, এর সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ ফার্স্ট। আর আমাদের জন্য বাংলাদেশের ইন্টারেস্ট ফার্স্ট!

আশিক আরও লেখেন, অনেকের কাছে শুনি ট্রাম্প আসার পর নাকি সব শেষ হয়ে যাবে আমাদের। প্রথমত, আমেরিকার ফরেন পলিসি খুব স্টেবল। তারা হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি টার্ন করে না। আর দ্বিতীয়ত, আমরা সৎ হতে পারি, কিন্তু একদম গাধা না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + four =

Back to top button