Lead Newsঅপরাধ ও দূর্ঘটনা

ডা. সাবরীনার মামলা ডিবিতে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. সাবরীনা আরিফের মামলা তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডা. সাবরীনাকে সেখানে জ্ঞিাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ  মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘ডা. সাবরীনাকে (গতকাল) সোমবার রাতেই ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন ডিবি কার্যালয়ে আছেন। প্রতারণার ঘটনায় দায়ের হওয়া ওই মামলাও ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ডিবির তেজগাঁও ডিভিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডা. সাবরীনাকে জ্ঞিাসাবাদ করা হচ্ছে। করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণার ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আর কেউ জড়িত কি না, তাও দেখা হচ্ছে। মোট কথা হচ্ছে, তিনদিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই সময়ের ভেতরে সবকিছুর বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

এর আগে গতকাল ডা. সাবরীনার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে ডা. সাবরীনার স্বামী জিকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে ডা. সাবরীনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করোনা রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। আমরা অভিযানে নেমে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. সাবরীনা আরিফ। তাঁকে আদালতে প্রেরণ করা হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে।’

গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাসানাত খন্দকার এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন,‘করোনা পরীক্ষার কথা বলে ভুক্তভোগী রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরীসহ মোট ছয়জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। জেকেজির প্রজেক্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। এই নমুনা সংগ্রহের পর তা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত না। পরীক্ষা না করেই নিজেদের কম্পিউটার দিয়ে করোনার রিপোর্ট বানাত। এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছিল। পরে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করি। তারা করোনা রোগীদের সঙ্গে দুই মাস ধরে এই প্রতারণা করছে।’

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আরিফ চৌধুরীর দাবি, তেজগাঁও কলেজে তাদের একটি করোনার বুথ রয়েছে। ওই বুথ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত। সেখানে তারা নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এটার আদলে তারা জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা প্রজেক্টের নামে একটি পেজ খুলেছিল ফেসবুকে। সেখানে ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। ওই পেজ থেকে যেসব কল আসত, তাদের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করত। যাদের নমুনা সংগ্রহ করত,তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রতি রিপোর্টের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নিত ১০০ ডলার। অথচ কারো নমুনা পরীক্ষা না করেই তারা ইচ্ছেমতো নেগেটিভ-পজিটিভ বসিয়ে রিপোর্ট দিত।’

হাসানাত খন্দকার আরো বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারের সময় তিন হাজার করোনা কিট, ৪০টি ভুয়া করোনার সনদ এবং তাদের কাছে থাকা চারটি ল্যাপটপ ও দুটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ওই দিন মামলা করে।

গত ২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ও ডা. সাবরীনার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকেই সরকারি চিকিৎসক হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকা সাবরীনার নাম এবং জালিয়াতির তথ্য নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ সময় একটি ল্যাপটপে ১৫ হাজার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির আলামত পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়।

জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যা জব্দ করা ল্যাপটপে পাওয়া গেছে।

শুধু জেকেজি-ই নয়, দ্বিতীয় স্বামীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপেরও চেয়ারম্যান ছিলেন ডা. সাবরীনা। আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ওভাল গ্রুপের ওয়েবসাইট ডাউন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওভাল গ্রুপের ঢাকা এক্সপো-২০১৯ নামে একটি ওয়েবসাইটে ডা. সাবরীনা চৌধুরীকে ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১১ বার চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম লেখা হয়েছে। ওভাল গ্রুপের প্রোফাইলেও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে সাবরীনার নাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =

Back to top button