অপরাধ ও দূর্ঘটনা

ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে প্রথম হওয়া জাকারিয়ার ওপর হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারকারী সাখাওয়াত জাকারিয়ার ওপর হামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরের পর ফার্মগেটে ফোকাস কোচিং সেন্টারে অবস্থানকালে আইকন প্লাস নামের অন্য একটি কোচিং সেন্টারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের পর জাকারিয়া ফোকাসের ফার্মগেট শাখায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে ফোকাস কোচিং-এর পক্ষ থেকে জাকারিয়াকে তার সাফল্যের জন্য সম্বর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় কয়েকজন লোক সেখানে ঢুকে জাকারিয়াকে বাইরে বের করার চেষ্টা করেন। তখন জাকারিয়া বাইরে যেতে না চাইলে কয়েকজন তার মাথায় চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর তারা (হামলাকারীরা) বাইরে চলে যান।

এদিকে জাকারিয়া নিজেই অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার ওপর হামলাকারীরা একটি কোচিং সেন্টারের লোক।’ তবে তিনি সেই কোচিং সেন্টারের নাম বলেননি।

জাকারিয়ার ওপর হামলার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে ফোকাস কোচিং সেন্টারের ফার্মগেট শাখার এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময়ে আমি বাইরে ছিলাম। তবে বিষয়টি টেলিফোনে শুনে আমি তাৎক্ষণিকভাবে আইকন প্লাস-এর কর্মকর্তা কামাল নামের একজনের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি (কামাল) আমাকে জানান, তিনি বিষয়টি দেখছেন। এর কিছু পরেই হামলাকারীরা ফোকাস থেকে চলে যায়।

ঘটনার সময়ে ফোকাস কোচিং-এ অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, আইকন প্লাস কোচিং-এর কিছু লোকজন (শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা) জাকারিয়ার ওপর হামলা করেছে। পরে উপস্থিত লোকজনের তীব্র প্রতিবাদে তারা সেখান থেকে চলে যায়। যদিও ‘আইকন প্লাস’-এর এক প্রতিনিধি হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, এই ঘটনার পর জাকারিয়া তার নিজের ফেসবুক পেজে ঘটনাটি তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি ফোকাস ফার্মগেট শাখায় আছি। লাইভের সময় হঠাৎ বাইরে হুড়োহুড়ি। কিছুক্ষণ পরে কিছু লোকজন ঢুকল। ঢুকেই বলল, ‘এই তোরা কি মিটিং করোছ নাকি।’

তারা এসেই ফোকাসের ভাইদের বের করে দেয়ার চেষ্টা করল। আমাকেও বাইরে নেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু যাইনি। এক পর্যায়ে টানাটানি। তাতেও না নড়ায় এক কালো পাণ্ডা মাথায় থাপ্পড় দিল। শেষ পর্যায়ে ফোকাসের ভাইদের বাইরে পাঠিয়ে দিল। এক পর্যায়ে দেখলাম একটি কোচিংয়ের কিছু টিচার। তারা আসছিল জোর জবরদস্তি করে বলাবে ‘জাকারিয়া আমাদের কোচিংয়ের ছাত্র।’ আমার যদি কিছু হয় তাহলে তারা দায়ী। এখন ফার্মগেটেই আছি। টিচাররূপী কিছু কুলাঙ্গারও চলে গেল।

জাকারিয়া আরো লিখেছেন, আমি ঐ কোচিংয়ের নাম বললাম না। ক্ষমা করে দিব বলছি। তাই ক্ষমা করে দিলাম। আশা করি আর জীবনেও এমন কাজ করবেন না। টিচাররূপী কুলাঙ্গারগুলোও মানুষ হবেন। আমি ফোকাসেই কোচিং করেছি। অন্য কোথাও কোচিং করিনি।

এদিকে মোহাম্মদ লিমন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জাকারিয়াকে আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী দাবি করা হয়। তিনি স্ট্যাটাসে লিখেন, আইকন প্লাস যাত্রাবাড়ি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ১ম স্থান অধিকারী জাকারিয়াকে অভিনন্দন। মোহাম্মদ লিমন আইকন প্লাসের শিক্ষক বলে জানিয়েছেন কোচিং সেন্টারটির সমন্বয়ক আজিজ খান।

জাকারিয়া এই স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে তিনি লিখেন, ‘হুদাই। আমি একটা ফ্রি ক্লাস করছিলাম। তখন ওরা পরীক্ষা নিছিল। ওখানে ফার্স্ট হইছিলাম। ফ্রি ক্লাস করলেই কোচিং-এর ছাত্র হয় জানতাম না।’

ফোকাস কোচিং সেন্টারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর জাকারিয়া আমাদের কোচিং সেন্টারের প্রধান কার্যালয়ে আসে। তখন আমরা তাকে সম্বর্ধনা দেই। এ সময় একই বিল্ডিংয়ে থাকা আইকন প্লাসের কয়েকজন এসে তাকে নিয়ে যেতে চান। এখানে আমাদের প্রতিনিধিদের বের করে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জবরদস্তি করেন। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়।

সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, ‘আমি ফোকাস অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা স্থানীয় গুণ্ডাদের নিয়ে এসে আমাকে জিম্মি করে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় তারা ফোকাসের শিক্ষকদের বের করে দিয়ে আমাকেও টেনে নিতে চেষ্টা করে। আমি না যেতে চাওয়ায় তাদের একজন আমাকে মাথায় থাপ্পড় দেয়।’

উল্লেখ্য, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পথম হয়েছেন ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী জাকারিয়া। পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৮০.৫। দাখিল ও আলিমের ফলসহ মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০০.৫। জাকারিয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। ভর্তি পরীক্ষায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =

Back to top button