আন্তর্জাতিক

তলানিতে ইমরানের জনপ্রিয়তা, ক্ষমতায় কী ফের সেনাবাহিনী আসছে?

সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় ফেরার আবারো আলোচনা জোরালো হয়েছে পাকিস্তানে। ইমরান খান সরকারের কাজকর্মে পাকিস্তান সেনা কর্মকর্তাদের গত কয়েক মাসে নাক গলানো এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ ঘিরে এমন আশঙ্কাই জোরদার হচ্ছে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাশ যত আলগা হচ্ছে, ততই সেনা কর্মকর্তারা সরকারের অভ্যন্তরে জাঁকিয়ে বসছেন।

তাঁদের মতে, আর্থিক সংকট, মূল্যবৃদ্ধিসহ একাধিক ইস্যুতে ইমরানের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। সেই সুযোগে সরকারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছেন সেনা কর্মকর্তারা। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন তাঁরা।

গতকাল ভারতের দুটি প্রভাবশালী পত্রিকায় নানা সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালে প্রায় ৪৬ শতাংশ জনমত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন ইমরান খান। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ‘নয়া পাকিস্তান’-এর।

এর পর থেকে গত তিন বছরে দেশের অর্থনৈতিক সংকট তো কাটেইনি, উল্টো আরো খারাপ হয়েছে। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার অবস্থা। ইমরানের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, কড়া হাতে তার মোকাবেলা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের জেরে পাকিস্তানের নাগরিকদের একটা বড় অংশ ইমরানের থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। এই জনপ্রিয়তা হ্রাসের জেরে সরকার-প্রশাসনেও তাঁর রাশ ক্রমেই আলগা হচ্ছে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরানের এই লাগাম যত আলগা হবে, সেই ফাঁক গলে প্রবেশ ঘটবে সেনা কর্মকর্তদের। পাকিস্তানের ইতিহাসে এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। সাত দশকের ইতিহাসে অধিকাংশ সময়ই সেনা কর্মকর্তারা দেশ শাসন করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী সংস্থা নিউ ইয়র্কের ‘বিজিয়ার কনসাল্টিং’-এর সভাপতি আরিফ রফিকের মতে, ইমরানের আধিপত্য যত কমবে, সেনার কর্তৃত্ব ততই বাড়বে। সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ যত বাড়বে, ততই তাঁরা ক্ষমতার অলিন্দে জাঁকিয়ে বসবেন। তিনি বলেন, ‘ইমরানের ওপর চাপ ক্রমেই আরো বাড়বে। কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে পাকিস্তানের অর্থনীতি আরো বেশি সংকটের মধ্যে পড়তে চলেছে।’

সেনার আধিপত্য কিভাবে বাড়ছে, তার উদাহরণ দিয়ে আরিফ বলেন, ‘করোনাভাইরাস ও লকডাউন নিয়ে সেনার সঙ্গে ইমরানের মতবিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর নিয়ে সেনা-সরকারের ঐকমত্য না হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি সেনার প্রধান মুখপাত্রকে কার্যত সরকারকে উপেক্ষা করে খোলাখুলি কড়া লকডাউনের নির্দেশিকা জারি করতেও দেখেছি আমরা। আবার একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা করোনাভাইরাসের তথ্য দেওয়া নিয়ে কার্যত সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন।’

এশিয়ার মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভারতের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। সে দেশে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা দুই ২০০ ছাড়িয়েছে। এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্বেও সেনার আধিপত্য নজর এড়ায়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ব্রিফিংয়ের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের সাহায্য করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা—এমন ছবি দেখা গেছে দেশের জাতীয় টেলিভিশনে।

এর ওপর সাম্প্রতিক বেশ কিছু পদে সেনাবাহিনীর বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম সালিম বাজওয়া ইমরান খানের যোগাযোগ পরামর্শদাতা পদে যোগ দিয়েছেন। চীন-পাকিস্তান যৌথ উদ্যোগে রাস্তা তৈরির প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বও বর্তেছে তাঁর ওপরে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি পাকিস্তানি সেনা। ইমরানের এক মুখপাত্র নাদিম আফজার চানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী সৈয়দ শিবলি ফরাজকে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি বলে জানিয়েছে একটি সংবাদ সংস্থা।

সূত্র : আনন্দবাজার, এই সময়।

সূত্র : আনন্দবাজার, এই সময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 3 =

Back to top button