Lead Newsক্রিকেটখেলাধুলা

তিন দিনেই টাইগারদের দম শেষ

শক্তিশালী ভারতের সামনে কোনমতে তিন দিন টেস্ট খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম একাই যা লড়লেন, সতীর্থরা কেউই সেভাবে সঙ্গ দিতে পারলেন না। ফলে আশা জাগিয়েও ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ। তিন দিনের মধ্যেই ইন্দোর টেস্টটি এক ইনিংস এবং ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে জিতে নিলো বিরাট কোহলির ভারত। তাতে দুই ম্যাচের সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ১-০ তে।

প্রথম ইনিংসটাই শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা। জবাবে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ভারত। ম্যাচ ড্র কিংবা জয়ের সম্ভাবনা তো ছিল না, ছিল ইনিংস লজ্জা এড়ানোর। সেটাও পারলো না মুমিনুল হকের দল।

ভারতের ছুড়ে দেয়া ৩৪৩ রানের লিডের নিচে চাপা পড়ে আজ শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম পাঁচ ওভার দেখেশুনে ভালোভাবেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস।

কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে বোলিং করতে এসে প্রথম বলেই দারুণ এক ইনসুইংগারে ইমরুলের লেগ স্টাম্প উপড়ে দেন উমেশ। প্রথম ইনিংসের মতোই ৬ রানে ফিরে যান ইমরুল।

একই ওভারের পঞ্চম বলে অল্পের জন্য টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হকের উইকেটটি পাননি উমেশ। তার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে কোনো শট না খেলে ছেড়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল, বল ছুঁয়ে যায় পেছনের প্যাড।

ভারতীয় ফিল্ডারদের করা জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। নিজেদের মধ্যে কথা বলে রিভিউ নেন বিরাট কোহলি। রিপ্লেতে দেখা যায় অল্পের জন্য অফস্টাম্প মিস করতো বলটি। ফলে বেঁচে যান মুমিনুল। রিভিউ নষ্ট হয় ভারতের।

অধিনায়ক বেঁচে গেলেও পরের ওভারে নিজের উইকেট সামলে রাখতে পারেননি তরুণ ওপেনার সাদমান। ইমরুলের দেখাদেখি তিনিও ঘটান প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি।

দিনের সপ্তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৬ রানে আউট হয়েছিলেন সাদমান। আজও দিনের সপ্তম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছেন তিনি। তবে এবার আর ক্যাচ নয়। ইশান্ত শর্মার শার্প ইনসুইং ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন সাদমান। এবারও করেছেন ঠিক ৬ রান।

নিজের রানের খাতা খোলার আগে মুমিনুল রিভিউয়ের হাত থেকে বেঁচে গেলেও কয়েক ওভার পর আর বাঁচাতে পারেননি নিজের উইকেট। মোহাম্মদ শামির করার প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্টাম্প গার্ড দিয়ে ডিফেন্স করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক।

কিন্তু বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে পেছনের প্যাডে। প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। আবার রিভিউ নেন কোহলি। এবার রিপ্লেতে দেখা যায় বল সোজা আঘাত হানতো লেগস্টাম্পে। ফলে ৭ রান করে আউট হয়ে যান মুমিনুল।

শুরুর তিন ব্যাটসম্যানের আঁটসাঁট ব্যাটিং দেখেই হয়তো পাল্টা আক্রমণের পথ ধরেছিলেন চার নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। চারটি চারের মারে দ্রুতই করে ফেলেছিলেন ১৮ রান। কিন্তু অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী হয়ে বড় শট খেলার প্রয়াসে তিনি ধরা পড়েন শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো মায়াঙ্ক আগারওয়ালের হাতে। মাত্র ৪৪ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

এরপর থেকে অতি সাবধানী হয়ে খেলতে থাকেন দুই ভায়রাভাই মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজন মিলে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশনের বাকি ৭.৫ ওভার, যোগ করেছেন ১৬ রান।

কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ফিরেই আলসে শটে স্লিপে দাঁড়ানো রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দেন ১৫ রান করা মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়েই উইকেটে আসেন লিটন। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইতিবাচকভাবে খেলছিলেন লিটন কুমার দাস। দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে গড়ে ফেলেছিলেন ৬৩ রানের জুটি। নিজেও পেরিয়েছিলেন ৩০ রানের কোটা।

কিন্তু এরপর হুট করেই বাজেভাবে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে পুরো শট করেননি লিটন। ব্যাট চালিয়েও যেনো থেমে যান তিনি।

যে কারণে বলটি চলে যায় সোজা অশ্বিনের হাতে। সহজ ক্যাচটি তালুবন্দী করতে কোনো সমস্যাই হয়নি ভারতীয় স্পিনারের। আউট হওয়ার আগে দারুণ কিছু শটে ৬ চারের মারে ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন লিটন।

লিটন সাজঘরে ফিরে যাওয়ার অনেকেই হয়তো ধরে নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় সেশনেই শেষ হয়ে যাবে ম্যাচ। মুশফিককে সঙ্গ দেয়ার থাকবে না কেউ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০ রানে শেষের পাঁচ উইকেট হারানোয় এমন ভাবনা আসা মোটেও অমূলক নয়।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ভিন্ন চিন্তাই করেছেন মুশফিকুর রহীম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। খেলার ধারার বিপরীতে দুজন মিলে অবিচ্ছন্ন সপ্তম উইকেটে জুটিতে যোগ করেন মূল্যবান ৫৯ রান। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন মুশফিক।

এই জুটিটি ভাঙে মেহেদী মিরাজের আউটে। দেখেশুনে খেলতে থাকা এই অলরাউন্ডারকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন উমেশ যাদব। ৫৫ বলে ৫ চার আর ১ ছক্কায় গড়া মিরাজের ৩৮ রানের ইনিংসটি থামে তাতে।

এরপর লোয়ার অর্ডারের তাইজুল ইসলামকে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন মুশফিক। ১১.৪ ওভার কাটিয়ে দিয়েছিলেন তারা। যদিও মাত্র ১৪ রান ওঠে এই জুটিতে, তবে ভারতীয় বোলারদের ঘাম ঝরছিল।

শেষ পর্যন্ত এই প্রতিরোধ ভেঙেছেন মোহাম্মদ শামি। শর্ট বলে তাইজুল ইসলামকে (৬) বোকা বানিয়ে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার ক্যাচ বানিয়েছেন ভারতীয় এই পেসার।

এরপর আর সঙ্গী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেননি মুশফিক। নিজেই তাই ঝুঁকি নিয়ে চেয়েছিলেন রানটা বাড়িয়ে নিতে। তাইজুল আউট হওয়ার পরের ওভারেই অশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে চেতেশ্বর পূজারার ক্যাচ হন টাইগার দলের শেষ ভরসা।

১৫০ বল মোকাবেলায় ৭ বাউন্ডারিতে গড়া মুশফিকের ৬৪ রানের ইনিংসটি থেমে যাওয়ার পর আর অলআউট হতে সময় লাগেনি বাংলাদেশের। ৬৯.২ ওভারে ২১৩ রানেই গুটিয়ে গেছে সফরকারিদের দ্বিতীয় ইনিংস।

প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন মোহাম্মদ শামি। ৩১ রানে তিনি নিয়েছেন ৪টি উইকেট।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − five =

Back to top button