Breakingআন্তর্জাতিক

তুরস্ক কেন কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিতে চায়?

আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো সৈন্যরা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া শুরু করলে সেখানে থাকা বিদেশী মিশনগুলোতে চাকরি করা বিদেশিরা, তাদের পরিবার এবং ত্রাণ সংস্থার কর্মীদের যাতায়তের নিরাপত্তার জন্য তুরস্কের কাছ থেকে কাবুল এয়ারপোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোট আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে। ২০ বছরে দেশটিকে ক্ষত বিক্ষত করে রেখে যাচ্ছে। বিষয়টিকে তালেবান তাদের বিজয় হিসেবে দেখছে। কিন্তু দেশটির ভবিষ্যতের জন্য এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। বিদেশী সৈন্যরা চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে হামলা, আক্রমণ। ভবিষ্যতে সংঘাত হয়তো আরও বাড়বে।

একদিকে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার, অন্যদিকে তালেবান এবং অন্য সব সশস্ত্র গ্রুপ। আগামীতে কে বসবে সরকারে। কোনও একটি গ্রুপ ক্ষমতায় আসবে? নাকি কোয়ালিশন সরকার হবে? কার নেতৃত্বে চলবে আফগানিস্তান? সেখানে কি ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা হবে? নাকি বর্তমান বিশ্বের গতানুগতিক ধাঁচের কোনো সরকার হবে।

বর্তমানে যারা সরকারি চাকরি করছেন, যারা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতে আছেন তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। সেখানে, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান, চীন এবং ভারতের অবস্থান কী হবে? এরকম হাজারো প্রশ্নকে সামনে রেখেই ন্যাটো আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় সেখানে থাকা বিদেশীদের নিরাপত্তা, বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতার অবাদ বণ্টন, বিদেশি কূটনীতিবিদ এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং পশ্চিমাদের অন্য সব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর নিরাপত্তার জন্য তুরস্কের শরণাপন্ন হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

কোন সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র বন্দর না থাকা এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির বহির্বিশ্বের সাথে সহজ যোগাযোগের একমাত্র পথ কাবুল এয়ারপোর্ট। তুরস্ককে এই কাবুল বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

তুরস্ক বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে। কিন্তু তার মানে এ নয় যে তুরস্ক এই এয়ারপোর্টের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।

তুরস্ক এক্ষেত্রে বড় কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে আমেরিকা এবং ন্যাটো জোটকে।

এক নম্বর শর্তঃ এই দায়িত্বের বিনিময়ে তুরস্ককে লজিস্টিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে হবে। অর্থাৎ তুরস্ক বর্তমানে যে অর্থনৈতিক, এবং আন্তর্জাতিক সামস্যায় আছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে দেখছে এই গুরু দায়িত্বটিকে!

দুই নম্বর শর্তঃ তুরস্ক এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং ন্যাটো সদস্য হাঙ্গেরিকে সাথে নিবে। আর ন্যাটোর তা মেনে নিতে হবে।

এছাড়াও আছে কিছু অলিখিত বা গোপন শর্ত – যেমন তুরস্কের এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার জন্য আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে হবে। তুরস্ককে এফ৩৫ যুদ্ধ বিমান প্রজেক্টে আবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে তুরস্কের আরও যে সব স্বার্থ আছে সেগুলো কিছুটা এরকম

১। ন্যাটো তথা আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ভালো করা। দু’দেশের মধ্যে যে ঝামেলাগুলো চলছে সেগুলো সমাধানে নতুন কোনও সম্ভাবনার দ্বার উম্মচন চাচ্ছে তুরস্ক।এতে ন্যাটোর মধ্যে নিজের অবস্থানকে আরও শক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করছে তুরস্ক।

আঙ্কারা জানে যে, চীনের দ্রুত প্রসার ঢেকাতে যুক্তরাষ্ট্র এখন মরিয়া। ন্যাটো চীনের বিরুদ্ধে আরও শক্ত অবস্থানে যেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে। চীনের রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের বিরুদ্ধে সব ফ্রন্টে লড়তে চায় পশ্চিমা জোট। আফগানিস্তান রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভে না থাকলেও চীনের সাথে বর্ডার আছে দেশটির। ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে দেশটি। তাই চীনকে ঠেকানোর অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে তুরস্কের উপস্থিতি ন্যাটোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তুরস্ক চায় এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে।

২। অন্যদিকে তুরস্কের নিজস্ব কিছু কৌশলগত স্বার্থ আছে আফগানিস্তানে। তুরস্ক যদি ওখানে দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারে তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে সামরিক ঘাঁটিও গড়তে পারে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গভীর করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তুরস্ক, আফগানিস্তানে তুর্কি সেনাদের উপস্থিতি বা একটি সামরিক ঘাঁটি সে পরিকল্পনাকে আরও মজবুত করবে।

৩। আর আফগানিস্তানে তুরস্কের, বিনিয়োগ, ব্যবসা, সাহায্য সহযোগিতার বিষয়গুলো তো আছেই।

কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, তুরস্ক, তালেবানের সাথে যুদ্ধ জড়াবে কি না? কারণ তালেবান এই পরকিল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তালেবান মুখপাত্র স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, যে কোনও অজুহাতেই হোক না কেন, কোনো দেশের সৈন্য আফগানিস্তানে থাকলে তাদের ওপেন টার্গেটে পরিণত হবে। আর তুরস্ক যেহেতু ন্যাটোর অংশ হিসেবে আছে তাই তুরস্কের আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে হবে। এখণ তুরস্ক কিভাবে তালেবানের এই থ্রেটকে মোকাবেলা করবে?

এর সহজ উত্তর হচ্ছে, তুরস্ক তালেবানের সাথে অতীতেও যুদ্ধে জড়ায় নি আর ভবিষ্যতেও জড়াবে না।

তুরস্ক কিন্তু সেই ২০০১ সাল থেকেই আফগানিস্তানে আছে। ন্যাটোর অংশ হিসেবে প্রায় ৫০০ তুর্কি সেনা এখনো আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করছে। তুরস্কের সৈন্যরা গত দুই দশক বছর ধরে কাবুলে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তবে এক্ষেত্রে তুরস্কের মূল নীতি ছিলো, তার সেনারা সরাসরি কোনও যুদ্ধে অংশ নিবে না। তুরস্কের সেনাবাহিনী সেখানে, রাস্তা তৈরি করেছে, কালভারট তৈরি করছে, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল মেরামত করছে, আফগানিস্তানের পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরেও তুরস্ক কোনো যুদ্ধ মিশন নিয়ে আফগানিস্তানে ছিলো না।

এমনকি, বর্তমানে কাবুল বিমানবন্দরের লজিস্টিক এবং মিলিটারি অপারেশান কিন্তু তুরস্কই পরিচালনা করছে।

এছাড়াও তুরস্কের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক অনেক গভীর। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সেই সম্পর্ক কখনই বৈরি হয়নি। তুরস্ক সবসময় আফগান জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আফগান জনগণও এ কারণেই তুরস্ককে ভালবাসে।

অন্যদিকে আফগানিস্তানের সরকার এবং তালেবানের সাথে তুরস্ক অনেক বছর ধরেই একটি বালেন্সিং সম্পর্ক বজায় রাখছে। দুই পক্ষের ওপরেই তুরস্কের যথেষ্ট প্রভাব আছে।

আফগানিস্তানে তুরস্কের থাকার ব্যপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম্পকার্ড হলো পাকিস্তান। কারণ, তালেবানের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব আছে যে দেশটির সেটি হলো পাকিস্তান। ইসলামাবাদ, আফগানিস্তানে তালিবানের ভবিষ্যত তৈরি করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এমনও বলা হয় যে, তালেবান পাকিস্তানের কথায় উঠবস করে। অর্থাৎ আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি একরকম পাকিস্তানের হাতেই।

তুরস্কও জানে পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়া ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে কোনো কিছু করা কঠিন হবে। তাইতো এরদোগান এই ট্রাম্পকার্ডটাই ব্যবহার করছেন। ন্যাটো সম্মেলনে যখন কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে আলোচনা করছেন তখন পাকিস্তানকে সাথের রাখার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তানের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি ন্যাটো মেনে নিবে কি না? আর এক্ষেত্রে পাকিস্তানও বা কি ধরণের পদক্ষেপ নিবে?

আফগানিস্তানে তালেবানকে সমর্থন করার কারণে পাকিস্তান অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে গত কয়েক বছর। পড়েছে পশ্চিমাদের আক্রোশে। তারপরও তালেবানের পাশে ছিলো। এখন সেই তালেবান আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার পর্যায়ে চলে এসেছে। আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতা পাচ্ছে। আগামীতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে তালেবান। যা মূলত পাকিস্তানেরই স্বার্থে কাজ করবে। সুতরাং পাকিস্তান তার এই স্বার্থে কাউকে ভাগ বসাতে দিতে চাইবে না। এ কারণে পাকিস্তানও চায় না ওখানে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তুরস্ক থাকুক।

কিন্তু তুরস্ক পাকিস্তানের জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ, যে ইসলামাবাদ আঙ্কারার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার সাহস পাবে না।

অন্যদিকে, যে পাকিস্তান চীনের ডান হাত আর রাশিয়ার বাম হাত, সেই পাকিস্তানকে ন্যাটোর স্বার্থ রক্ষায় আফগানিস্তানে তুরস্কের পাশে দেখতে চাইবে না মার্কিনী জোট। সুতরাং অনেক জটিল সমীকরণ আছে এখানে।

এখন দেখার বিষয় হোলো তুরস্ক ন্যাটোকে কতোটুকু চাপ দিতে পারে আর পাকিস্তানকে কতোটুকু কনভিন্স করতে পারে।

কারণ, তালেবান তুরস্কের বিরুদ্ধে যে হুমকি দিয়েছে তা মূলত তালেবানের হুমকি না, পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের হুমকি। কয়েকমাস আগে ইস্তানবুলে তালেবান এবং আফগান সরকারের মধ্যে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তাও তালেবান রাজি না থাকায় বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রেও পাকিস্তানই তালিবানকে নিষেধ করেছে বলে মনে করা হয়।এগুলো হচ্ছে পাকিস্তানের দর কষাকষির অস্ত্র। দেখা যাক দর কষাকষিতে কে কতোটুকু পেরে উঠে।

পাকিস্তান সাথে থাকলে তালেবানও তুরস্ককে মেনে নিতে বাধ্য হবে।

আফগানিস্তান নিয়ে তুরস্কের আর কোনও প্লান আছে কি না?

তুরস্ক আসলে চায় আফগানিস্তানে, আমেরিকা পরবর্তী সংঘাতের অবসান হোক। কারণ আমেরিকা বা ন্যাটোর সৈন্যরা চলে গেলেও আফগানিস্তান কবে শান্তির মুখ দেখবে কেউ জানে না। দেশটিতে রাতারাতি শান্তি ফিরে আসবে বলে যারা মনে করেন তারা একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে পারেন।

সেই নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত রাশিয়া যখন আফগানিস্তান ছেড়ে যায়, তখনও মনে করা হয়েছিলো যে দেশটিতে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু তখন আফগান মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মধ্যে শুরু হয় ক্ষমতার লড়াই। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত চার বছর ধরে চলতে থাকে সেই লড়াই। মারা যায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ।

সে লড়াই বন্ধে অনেক দেশ তখন ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল। সে সময়ের খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা হোলো, সৌদি আরব বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালের ১২ই মার্চ রমজানের আগের দিন এই মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে একত্র করে পবিত্র কাবা শরিফের মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে তারা একটি চুক্তি সই করে করে।

এক সপ্তাহ আগে সম্পাদিত শান্তি চুক্তি মেনে নেওয়ার প্রতুশ্রুতি দিয়ে মসজিদে হারামের মধ্যে ওই নতুন চুক্তিটি সই করে। সেই চুক্তিপত্র তখন কাবা শরিফের দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয় যেন কোনও মুজাহিদ গ্রুপ এই চুক্তি ভঙ্গ করার সাহস না পায়। অথচ তাদের বহনকারী বিমান আফগানিস্তানের মাটিতে স্পর্শ করার আগেই শুরু হয় আবার সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। কাবার গায়ে টানানো সেই চুক্তি পত্রও তখন শান্তি নিয়ে আসতে পারেনি আফগানিস্তানে।

সুতরাং তুরস্ক চায় সেই ঘটনার পুনরাবৃতি না হোক। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফিরে আসুক আফগানিস্তানে।

এখানে মনে রাখা দরকার যে, প্রায় ৫০ বছর ধরে সংঘাতে জর্জরিত একটি দেশে অনেক সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি হয়। আমরা আফগানিস্তানে শুধু তালেবানকেই দেখি বা জানি। কিন্তু ওখানে বিভিন্ন দেশের সমর্থনে অনেক গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইরান, সৌদি আরব, এমনকি ভারতের সমর্থিত গ্রুপ আছে ওখানে। সুতরাং আমেরিকা পরবর্তী আফগানিস্তান কতটুকু সংঘাতমুক্ত থাকবে তা এখই বলা মুশকিল।

এছাড়াও পশ্চিমাদের পুতুল সরকার, যা এখন ক্ষমতায় আছে, তার ভবিষ্যৎ কি হবে? ২০ বছর ধরের ক্ষমতায় থাকা সেই সরকারের আমলা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ অন্যসব সরকারি অফিসারেদের কি হবে? তালেবান ক্ষমতায় আসলে তাদের তাদেরভাগ্যে কী ঘটবে ? এগুলো সবই এখনো অজানা।

তাই তুরস্ক চায় আমেরিকা পরবর্তী আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব অবদান রাখা। একারণেই তুরস্ক পাকিস্তানকে পাশে রাখতে চায়। পাকিস্তান এ বিষয়ে একটু ইতস্তত করলেও তুরস্কের প্রস্তাবকে ফেলে দিতে পারবে না। কিন্তু আসল বিষয় হচ্ছে আমেরিকা এবং ন্যাটো। তুরস্ক যে শর্তগুলো দিয়েছে তা ন্যাটোর পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব বলেই মনে হয়।

তাই আমার কাছে মনে হয় তুরস্কের কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে আসল ট্রাম্পকার্ড হচ্ছে পাকিস্তান। ন্যাটো পাকিস্তানকে মেনে নিলে, পাকিস্তানও তুরস্ককে মেনে নিবে আর তখন তালেবানও তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না।

তুরস্কের আফগানিস্তানে কী করা উচিত?

আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য তুরস্কের উচিত দেশটির গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ গুলোকে নিয়ে মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের সাথে বসা। একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি করা। ‘আফগানিস্তানে শান্তির রোডম্যাপ।’ এবং এই রোডম্যাপ অনুযায়ী আফগানিস্তানে একটি মুসলিম শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো উচিত। যার নেতৃত্বে থাকতে পারে তুরস্ক, পাকিস্তান এবং সৌদি আরব। যদিও অনেক কঠিন একটি কাজ কিন্তু অসম্ভব না।

তবে আমার মনে হয় না ন্যাটো বা আমেরিকা আফগানিস্তানকে পুরোপুরি ছেড়ে যাবে। এ বিষয়ে পরে আরেকদিক আলোচনা করবো।

এখনো কোন কিছুই ক্লিয়ার না। দিন যত যাবে দরকষাকষি তত বাড়বে।

যেই আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন হেরেছে, যেই আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ৩৮ দেশের জোট হেরেছে সেই আফগানিস্তানে তুরস্ক একাই সব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিবে বলে আমার মনে হয় না। তুরস্ক যে টোপ দিয়েছে আমেরিকা তা গিলবে কি না বলা মুশকিল। তাই দেখাযাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + four =

Back to top button