Lead Newsসরকার

চাল চোরেরা দুদকের নজরদারিতে

করোনাভাইরাসে দেশের পরিস্থিতি দিনের পর দিন চরম খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সরকারি হিসাবের বাইরেও অনেক মানুষ করোনার জীবাণু বহন করছে। মৃতের সংখ্যাও বেশি। বিশ্বব্যাপী যেখানে সবাই চরম সতর্ক।

জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণের জন্য বাংলাদেশ সরকারও বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও চুরির ঘটনা ঘটছে। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে দুর্নীতির মতো অপরাধ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) করতে দেবে না।

ডিলার নামধারী সরকারদলীয় স্থানীয় কিছু নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ত্রাণ চুরিতে জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় এক সপ্তাহে অন্তত সাড়ে তিন হাজার বস্তা চাল চুরি হয়েছে।

এসব চাল অন্যত্র বিক্রি করা হয়েছে। ওই টাকা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়েছে। কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে সরকার দেশজুড়ে ওএমএস, ১০ টাকা কেজির চাল ও ত্রাণের চাল বিতরণ করছে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে। কিন্তু অসাধু একটি চক্র জাতির এ ক্রান্তিলগ্নেও সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ত্রাণসামগ্রী বিতরণে দুর্নীতি করছে। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বেশ কিছু তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া প্রশাসন শক্ত হওয়ায় কোথাও কোথাও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটছে।

এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, দুদকের সব বিভাগীয় কার্যালয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিশন জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক যে কোনো কর্মসূচিতে দুর্নীতির মত অপরাধ করতে দেবে না।

দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও আমাদের প্রতিটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা স্থানীয় জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। কোনো অবস্থাতেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে দুর্নীতির ন্যূনতম সুযোগ দেয়া হবে না। এতে জড়িতদের সময়মতো আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় অন্তত ৫০ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের অনেকে পলাতকও রয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ চাল চুরির ঘটনাগুলো ঘটে।

এদিকে, শুধু চট্টগ্রামে বুধবার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা ১৫০০ খালি বস্তা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে অভিযান শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে শুক্রবার চট্টগ্রামের ডালমুড়িং থানায় মামলা করেছে। ওই মামলায় একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে খাদ্য অধিদপ্তরের ২০ হাজার বস্তা ত্রাণের চাল বস্তা পাল্টিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে বিক্রি করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকা। নুরজাহান নামে লেখা বস্তায় ঢুকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে চাল। গুদাম থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৫০০ খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ মাত্র একটি গুদাম অভিযান চালিয়ে এ অনিয়ম দেখতে পায়। এ সময় হাতেনাতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ১৬ মণ চাল উদ্ধার করা হয়। ২১ বস্তা চাল বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। পুলিশ ওই গুদাম থেকে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা ১৫০০ খালি বস্তাও উদ্ধার করেছে।

পরে গুদামটি সিল করে দেয়া হয়। এক সপ্তাহে এ ধরনের ২০ হাজার বস্তা চাল বস্তা পাল্টিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে বলে গ্রেফতার হওয়া গুদামের এক কর্মচারী পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

এদিকে, দেশের অন্যসব জেলায়ও প্রায় একই ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত নাটোরে ১৮ বস্তা, জয়পুরহাটে ৭ বস্তা, যশোরে ৮০ বস্তা, মণিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা, ঝিকরগাছায় ১০ বস্তা, বগুড়ার গাবতলীতে ১০০ বস্তা, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৮৮ বস্তা, শিবগঞ্জে ১৩ বস্তা, কিশোরগঞ্জে ৬০ বস্তা , নওগাঁয় ৪০ বস্তা, পিরোজপুরে ২৬ বস্তা, ফরিদপুরে ২৩ বস্তা, পটুয়াখালীতে ১০ বস্তা, সিলেটে ১২৫ বস্তা, বাগেরহাটে ১৮ বস্তা, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ৫৫০ বস্তা, ঝালকাঠিতে ৫০ বস্তা, সিরাজগঞ্জে ৬৫ বস্তা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৬ বস্তা এবং গাইবান্ধায় ২০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে।

৭ এপ্রিল নাটোর, জয়পুরহাট ও যশোর জেলায় সরকারি চাল লোপাট করতে গিয়ে কয়েকজন ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও রয়েছে।

এ তিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এছাড়া গাইবান্ধায় সরকারের ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির চাল উদ্ধার হয়েছে। বগুড়ায় হত দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওয়াজেদ হোসেন ও কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হকের বিরুদ্ধে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − seven =

Back to top button