থার্টি ফার্স্ট নাইট : বর্ষবরণ, নাকি ইমান হরণ?
ইংরেজি নববর্ষ আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। বর্ষবরণের জন্য চলছে নানান প্রস্তুতি। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে উদ্যাম বাদ্য-বাজনা আর নৃত্যের কম্পনে কেঁপে উঠবে ‘মসজিদের দেশ’ বলে খ্যাত এই বাংলাভূমি। ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির’ জিগির তোলা ব্যক্তিবর্গও মেতে ওঠবেন হাজার বছর পুরোনো গ্রিক-রোমান এ সংস্কৃতির নোংরা চর্চায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ইংরেজি বর্ষবরণ ও থার্টি ফার্স্ট নাইটের হাল-হকিকত।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকেই ইংরেজি সনের বিস্তৃতি। ইংরেজি সনের প্রত্যেকটা মাসের নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক-রোমান বিভিন্ন দেবতার নামে। তন্মধ্যে জানুয়ারি এসেছে রোমানদের দুমুখো ‘জানুস’ দেবতার নাম থেকে, যার এক মুখ সামনে, আরেক মুখ পিছনের দিকে ফেরানো। রোমান বিশ্বাস মতে, জানুস অতীত ও ভবিষ্যৎ দুটোই দেখতে পায়। তার এক মুখ বিগত বছরের দিকে, আরেক মুখ নতুন বছরের দিকে ঘোরানো। তাই তারা মনে করে, জানুস হলো ‘গড অব ডোর’ বা ভাগ্যদেবতা। এ জন্য তারা ভাগ্য সুপ্রসন্নের লক্ষ্যে জানুস দেবতার পূজা করত। আর যতদূর জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ’৪৬ সালে রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন।
ইসলাম উদার, সহনশীল ধর্ম ঠিক, কিন্তু নিজ আদর্শের জায়গায়, তাওহিদের প্রশ্নে প্রচণ্ড রক্ষণশীল। ইসলাম হলো একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঐশী জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সার্বিক ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার কোনো ক্ষেত্রেই মুসলিমরা উদ্বাস্তু নয়। বরং নিজেদের স্বতন্ত্র কৃষ্টি-কালচারের সাথেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বকে শাসন করেছে মুসলমানরা।
তবে আজ কেন তারা নিজেদের কৃষ্টি-কালচার বাদ দিয়ে বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচারের চর্চা করবে? কেন তারা হাজার বছর পুরোনো সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রিক-রোমান দেবতা জানুসের পূজা করবে? কেন বর্ষবরণের নামে বস্ত্রহরণের সংস্কৃতি মেনে নেবে তারা? আর ‘হাজারের বছরের বাঙালি সংস্কৃতির’ ধ্বজাধারীরাই বা কেন নিশ্চুপ থার্টি ফার্স্ট নামক ভিনদেশি এ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে?
জেনে রাখুন, রাসুলে আরাবি (সা.) বলেছেন, ‘যে যে জাতির সাদৃশ্য বা সাযুজ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪০৩১]
এছাড়াও আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন মদিনাবাসীর দুটি দিন ছিল, যেদিনে তারা আমোদ-প্রমোদ করত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুটি দিনের তাৎপর্য কী?’ তারা বলল, ‘আমরা জাহিলি যুগে এ দুদিনে আনন্দোৎসব করতাম।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এগুলোর পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ১১৩৪; আহমাদ, আলমুসনাদ : ১৩২১০]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন : “এ হাদিস প্রমাণ করে যে, মুসলমানদের জন্য কাফিরদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের জাহিলি যুগের দুটি উৎসব বহাল না রেখে রহিত করে দিয়েছেন। তাদের রীতি অনুযায়ী সেই দুইদিন তাদের আমোদ-উৎসবের অনুমতি দেননি। বরং তা রদ করে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটি বদল করে দিয়েছেন।’ এর দাবি হচ্ছে, পূর্বের আমল ত্যাগ করা। কারণ, বদল করার পর উভয় বিষয়কে জমা করা যায় না। কেননা, বদল শব্দের অর্থ হলো, একটি ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা।” [ইকতিযাউস সিরাত, পৃ. ৪৩৪-৪৩৫, সংক্ষেপিত]