রাজনীতি

দায়িত্ব শতভাগ পালন করতে না পারলে সরে আসা উচিত: সোহেল তাজ

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেছেন, কোন দায়িত্ব শতভাগ পালন করতে না পারলে তা থেকে সরে আসা উচিত। আর আমি আমার মন্ত্রীর দায়িত্ব একশ ভাগ পালন করতে পারছি না বিধায় মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছি।

সোহেল তাজ বলেন, আমি যখন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলাম। তখন মনে হয়েছে আমার দায়িত্ব বিশাল। আমার তখন অনুভূতি ছিল, আল্লাহ আমার কাঁধে এখন ষোলো কোটি মানুষের দায়িত্ব। মানে আমি হতভম্ব স্তব্ধ হয়ে গেছি। যে এতো বড় দায়িত্ব।

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের একমাত্র পুত্র সোহেল তাজ আরও বলেন, আমি যদি কোয়ালিটি না দিতে পারি এবং আমার কাঁধে যদি ষোলো কোটি মানুষের পবিত্র দায়িত্ব থাকে, তাহলে সে দায়িত্ব ধরে রাখা ঠিক না। আমি সেই চিন্তা থেকেই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমি কোয়ালিটি না দিতে পারলে আমি সেই কাজ করবো না।

তিনি বলেন, আমি দিলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিবো। আমার কাছে সে সময় মনে হয়েছে এ পবিত্র দায়িত্ব আমি কোয়ালিটি দিয়ে বা হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়ে করতে পারছি না যে কোনো কারনেই হোক। তো আমি মনে করেছি এখানে থেকে সরে যাওয়াটাই বেটার এবং আমি যদি থেকে যাই তাহলে একটা মুকুট পড়ে থাকা হবে। এটা হবে ভনিতা। তো এই ক্ষমতার মুকুট পড়ে থাকার মতো মানুষ আমি ব্যক্তিগতভাবে না। কারন আমার কাছে ক্ষমতা কোন বিষয় না। কারন আমি জানি সবকিছুর মূলে হলো সম্পর্ক। মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া। আর এই শিক্ষাই আমি আমার বাবা-মার কাছ থেকে পেয়েছি।

উপরোক্ত কথাগুলো সোহেল তাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন। এ সময় সোহেল তাজ কথা বলতে গিয়ে কেঁদে উঠেন। কয়েকবার কেঁদে দেশের কথা, বাবা-মার কথা বলেন। বিশেষ করে তার প্রিয় কাপাসিয়ার জনগণের কথা বলেন।

সোহেল তাজ আরও বলেন, আমার বাবা দেশকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে গেছেন। দেশ স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শত্রুর সামনে। আমার মা সারা জীবন দিয়ে গেছেন দেশের জন্য। এখনও আমার মেজো বোন এমপি হয়ে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। বড় বোন ও ছোট বোন লেখালেখি করে দেশ ও সমাজের কাজ করছেন।

বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজ আরও বলেন, আমাদের মানসিক কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কেউ যদি ভালো কাজ করে। তাহলে ভাবছেন হয়তো নির্বাচন করবে। নমিনেশন নিবে। আসলে আমি তা মানতে নারাজ। ভালো কাজ হবে একেবারে নিঃস্বার্থভাবে।

তিনি বলেন, যুবসমাজের হতাশাকে পজেটিভলী গাইড করতে পারি এবং আমাদের ভিতরে যদি বিশ্বাস আনতে পারি যে আমরাও পারি। আমাদের ভিতরেও সেই মেধা শক্তি আছে। আমরা যদি বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারি। আমরা সেই ভালো কাজটা কেন দেশে করতে পারব না। আর এখন যদি ওই হতাশাগ্রস্থ মানুষদের সঠিক ভাবে তৈরি করতে পারি। তাহলে সেই মানুষগুলো আগামী ২৫-৩০ বছর পর দেশের কাজে লাগবে। হয়তো আমি বা আমরা দেখে যেতে পারবোনা। কিন্তু আমার ছেলে বা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখবেন।

সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি আমার সাধ্যমত মতো ভালো কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশপ্রেম শুরু হবে নিজের থেকে। নিজের বাড়ি থেকে।

আওয়ামী লীগের দুই সময়ের কান্ডারি সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের একমাত্র ছেলে সোহেল তাজ বলেন, আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখনও সাদাসিধে জীবন যাপন করেছি। আমার ছেলে ল’তে পড়তো। বাসে চড়ে কলেজে যেতো। এখনও বাসে চড়ে যাতায়াত করে। নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে না। তো আমার ছেলের ভবিষ্যত, আপনাদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত কোথায়। দেশ তো একটাই বাংলাদেশ।

এদিকে প্রিয় নেতা সোহেল তাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে সত্য ও বাস্তবধর্মী কথা বলায় কাপাসিয়াবাসীও মিস করছেন সোহেল তাজকে। কাপাসিয়ার তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি সোহেল তাজ যেন আবারও রাজনীতিতে ফিরে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করেন।

অপরদিকে, ক্ষমতালিপ্সা ছেড়ে দেয়া সোহেল তাজের বাস্তব কথা বলার বিষয়টি এখন সর্বত্র চাউড় হচ্ছে। কাপাসিয়া তথা গাজীপুর জেলা জুড়ে এখন এ আলোচনা। এমনকি সারা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও সোহেল তাজের আলোচনা রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − eight =

Back to top button