দায়িত্ব ও ক্ষমতা দুটোই আমানত: বিদায়ী আইজিপি
বিদায়ী আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, দায়িত্ব ও ক্ষমতা হল একেকটা আমানত। পুলিশের স্বচ্ছ ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে এবং মানবিক গুণসম্পন্ন পুলিশবাহিনী গড়ে তুলতে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এ জন্য থানাকে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সর্বোপরি আমাদের পুলিশকে জনতার পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল আমার একান্ত প্রচেষ্টা।
ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সাধারণ মানুষ এখন পুলিশকে মানবিক পুলিশ হিসেবে দেখতে পাচ্ছে। এ কারণে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে মানুষ পুলিশের কাছে সাহায্য চাচ্ছে। পুলিশও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ। কষ্ট করে পড়াশোনা করলে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাওয়া যায়- এ বিশ্বাস তরুণ সমাজে প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নয়তো যেখান থেকে হতাশা জন্ম নেয়। সেই হতাশা থেকে বিশৃঙ্খল আর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমান্ডারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশের দৃশ্যমান সাফল্য মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার চেষ্টা করেছি। পাসপোর্টের ঠিকানা ভিন্ন থাকায় অনেককে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে।
জনগণের উদ্দেশে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আপনারা ঘরে থাকুন। আপনাদের জন্য আমরা রাস্তায় রয়েছি। নিজ উদ্যোগে পুলিশ ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। করোনা আক্রান্তদের পুলিশ নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জরুরি সার্ভিস ও সাপ্লাইলাইন ঠিক রাখতে পুলিশ মহাসড়কগুলোয় নিরলস কাজ করছে। পুলিশ হাসপাতালগুলোয় করোনা ইউনিট করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী আইজিপি ড. জাবেদ বলেন, পুলিশবাহিনী কোনো ব্যক্তির দায় নেয়নি এবং নেবেও না। অভ্যন্তরীণ তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলো মেনেই অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করব। দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য, আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে ড. জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। সৎ, মেধাবী ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সব সময় পরিচিত ছিলেন।
আইজিপি নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। তার সাহসী নেতৃত্বে পুলিশের দুর্নীতি অনেকটাই কমে এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া পুলিশের বদলি-নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তিনি।
ড. জাবেদ পাটোয়ারীকে বিদায় সংবর্ধনা : দায়িত্ব হস্তান্তরের পর সাবেক আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর সম্মানে বুধবার বিকালে পুলিশ সদর দফতরের সম্মেলনকক্ষ কৃষ্ণচূড়ায় এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বিদায়ী আইজিপি ড. জাবেদকে একজন সফল আইজিপি আখ্যায়িত করে তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ড. পাটোয়ারীর পরবর্তী কর্মজীবনের সাফল্য এবং তার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সুন্দর জীবন কামনা করেন তারা। কর্মজীবনে সার্বিক সহযোগিতা করায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
নবনিযুক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদকে অত্যন্ত দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করে ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, পুলিশকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আজকের পুলিশকে ২০৪১ সালের পুলিশ হিসেবে দেখতে চাই; যেটা নিশ্চয় নতুন আইজিপি আরও বড় উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। সাধারণ মানুষের কল্যাণে পুলিশের প্রতিটি সদস্য যে উদ্দীপনায় নিরলস কাজ করছেন, নতুন আইজিপি সেটা আরও এগিয়ে নেবেন। বেনজীরকে একজন দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, তার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী আরও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠবে।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ড. মইনুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে অংশ নেন অতিরিক্ত আইজিপি, ঢাকা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।