Breakingতথ্যপ্রযুক্তিস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ব্যথা, কমাবেন কীভাবে

‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের ভিড়ে, ড্রয়িংরুমে রাখা বোকাবাক্সতে বন্দী’—আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে কলকাতার ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ অদ্ভুত এক পৃথিবীর কথা বলেছিল। দিন বদলেছে, এখন আর ড্রয়িংরুম নয়, প্রত্যেকের হাতেই লুকিয়ে আছে একেকটা বোকাবাক্স। যে বোকাবাক্সে পৃথিবী চষে ফেলা সম্ভব। এমনও দিন আছে, যেখানে ঘুম বাদে বাকি সময়টা চোখ আটকে থাকে স্ক্রিনে। প্রয়োজনের তাগিদে রোজকার জীবনের একটা বড় অংশ কাটাতে হয় স্ক্রিনের সামনে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে অফিসের কাজ—সবটাই এখন স্ক্রিনে বন্দী। ফলে না চাইলেও কম্পিউটার বা ফোনের পর্দায় চোখ রাখতে হয় সবাইকে। স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চোখের ওপরে। অল্প বয়সেই অনেকে ভুগছেন চোখের সমস্যায়। কিন্তু প্রতিদিনের কাজের চাপ সামলে কীভাবে চোখের যত্ন নেবেন? কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো এখানে—

চোখের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ‘স্ক্রিন টাইম’-এ লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে স্ক্রিন যাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব পরামর্শ কোনো কাজেই আসবে না। তাঁদের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চোখের ব্যায়াম। সময় করে ছোট ছোট ব্যায়ামগুলোই গড়ে দিতে পারে ব্যবধান।

ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন

চোখের পলক ফেলার অভ্যাস চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। টানা স্ক্রিনের আলো সরাসরি চোখের ওপর পড়া অনেক ক্ষেত্রেই মাথাব্যথার সৃষ্টি করে। যা থেকে সহজে মুক্তি দিতে পারে ঘন ঘন চোখের পলক ফেলা।

২০-২০-২০ নিয়ম

এই নিয়মকে অনেকে চোখের বিশ্রামও বলে থাকেন। মূলত প্রতি ২০ মিনিট একটানা কাজ করার পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুতে নজর দিতে হবে। সে নজর হতে পারে বাইরের কোনো দৃশ্যে কিংবা অফিসের কোনো কোনায়। মোটকথা, স্ক্রিন থেকে অন্তত ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ২০ সেকেন্ড ধরে। এই ২০ সেকেন্ডে স্ক্রিনের দিকে তাকানো বাদে আপনি যেকোনো কিছু করতে পারেন। পানি খাওয়া, বিশ্রামকক্ষে যাওয়া, কোনো কাগজ প্রিন্ট করে আনা ইত্যাদি।

পামিং

এই ব্যায়ামের শুরুতে দুই হাতের তালু ভালো করে ঘষতে থাকুন, যতক্ষণ না হাতের তালু গরম উঠছে। এরপর দুই হাতের তালু দুই চোখের পাতার ওপর রাখুন। এতে বন্ধ চোখে উষ্ণ হাতের ছোঁয়া লাগবে, যা অনেকক্ষণ কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ক্লান্ত চোখকে স্বস্তি দেবে।

চোখের মণি ঘোরানো

কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখ বন্ধ করে চোখের মণি চারদিকে ঘোরান। ঘাড় ব্যথা করলে যেমন ঘাড় ঘুরিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করা হয়, ঠিক তেমন আরকি। চোখের জন্য খুবই উপকারী এই ব্যায়াম। এতে চোখের পেশি স্বস্তি পায়।

চোখ ভেজা ভেজা রাখুন

টানা স্ক্রিনের সামনে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় চোখ শুষ্ক হয়ে ওঠে। চোখ যত বেশি শুষ্ক হয়ে উঠবে, তত বেশি জ্বালাপোড়া করার আশঙ্কা বাড়বে। এ কারণে কিছুক্ষণ পরপর চোখে পানি দিন। কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন। এতে চোখের ভেজা ভেজা ভাব বজায় থাকবে এবং জ্বালাপোড়া তুলনামূলক কম হবে।

আলো ঠিক করুন

একেক কম্পিউটারে একেক রকমভাবে ব্রাইটনেস ঠিক করতে হয়। চোখের সুবিধা অনুযায়ী তা ঠিক করে নিন। এতে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও আপনার চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না। রাতে কম্পিউটার চালাতে হলে নাইট মোড চালু করে নিতে পারেন।

বসার অবস্থান ঠিক করুন

অফিসে আমরা কম্পিউটারের সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিই। এই বসারও কিন্তু নিয়ম আছে। কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে অন্তত ২০ ইঞ্চি দূরে নিজের বসার অবস্থান ঠিক করুন। ঘাড়-মাথা সোজা রেখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করুন। আলাদা কোনো ব্যায়াম না হলেও ঠিকঠাক অবস্থানে বসে কম্পিউটারে কাজ করা চোখের অনেক সমস্যাই দূর করে দেয়।

ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে যতই চাপ থাকুক না কেন, চেষ্টা করুন যতটা সময় পারা যায় স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে মনোযোগ দিতে। চোখের ব্যায়াম চোখকে সামান্য শান্তি দিলেও দিন শেষে স্ক্রিনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকা মানেই চোখের ক্ষতি। চোখের সমস্যা বেশি মনে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এতে চোখের স্বাস্থ্য ও আপনার কাজ—দুটোই চাপ থেকে রেহাই পাবে।

তথ্যসূত্র: রিবিল্ড ইয়োর ভিশন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 18 =

Back to top button