Lead Newsবিবিধ

“দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা” ইস্যুতে বাংলাদেশের উত্থাপিত রেজুলেশনটি জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে

শনিবার (২৪ জুলাই) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক বিজ্ঞ‌প্তি‌তে জানায় ‘সকলের জন্য দৃষ্টি : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ’ শীর্ষক দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রথম রেজুলেশন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। রেজু‌লেশন‌টি জাতিসংঘে উত্থাপন ক‌রে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞ‌প্তি‌তে জানা‌নো হয়, প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্বের শিকার বিশ্বের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষকে ২০৩০ সালের মধ্যে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ করে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই রেজুলেশন উত্থাপন করা হয়। ‘ফ্রেন্ডস অব ভিশন’র পক্ষে রেজুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। উপস্থিত সবাই রেজুলেশনটিকে অনন্য একটি রেজুলেশন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ বৈশ্বিক সংস্থা-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিরাময়ে সর্বসম্মতভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলো। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, আজকের এই রেজুলেশনটি চক্ষুসেবার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

রেজুলেশনটিতে নেতৃত্ব দিতে পেরে বাংলাদেশ সম্মানিতবোধ করছে। স্থায়ী প্রতিনিধি ব‌লেন, বিশ্বের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিয়ে বসবাস করছে। প্রতিরোধযোগ্য দৃষ্টিহীনতা একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এর বৈশ্বিক সমাধানের জন্য আমরা আজ ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছি। ‘আমাদের এই ঐক্যমত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ, তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জীবন ধারায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস।’ বৈশ্বিকভাবে পরিচালিত একটি জরিপের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা এবং অন্ধত্বজনিত কারণে মানুষের উৎপাদনশীলতা হারানোর ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে, যা একটি বিশাল বৈশ্বিক আর্থিক বোঝা। চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ শুধু শিক্ষা থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার ৪৪ শতাংশ হ্রাস করে না বরং এটি বেতনভুক্ত চাকরি পাওয়ার সুযোগ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। অন্ধত্বের ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতাও একটি ইস্যু। কারণ, দেখা গেছে ৫৫ শতাংশ অন্ধ মানুষ নারী বা বালিকা; পুরুষদের তুলনায় তাদের অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ৮ শতাংশ বেশি।

রেজুলেশনটিতে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জাতীয় প্রতিশ্রুতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও দাতাদের লক্ষ্য-ভিত্তিক অর্থায়ন, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব মোকাবিলায় সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। জাতিসংঘ যাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মাধ্যমে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি তাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করে নেয় সে অনুরোধও জানানো হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং এ সংক্রান্ত পরবর্তী পর্যালোচনায় চক্ষু সেবার জন্য নতুন একটি লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে। যথাযথ চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার নেই এমন মানুষগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ বাস করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

২০১৮ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৩০ ও এর বেশি বয়সের অন্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার। ৬০ লাখেরও বেশি মানুষের চশমা পরিধান বা অন্য কোনো উপায়ে দৃষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে গৃহীত ‘ভিশন-২০২০’ শীর্ষক বৈশ্বিক পদক্ষেপ সইকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। রেজুলেশনটি উত্থাপনের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে যোগ দেয় গ্রুপটির অপর দুই সহ-সভাপতি ‘এন্টিগুয়া ও বারবাডোস’ এবং আয়ারল্যান্ড। এতে সর্বমোট ১১৫টি দেশসহ পৃষ্ঠপোষকতা করে। সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রেজুলেশনটিকে বিশ্বের সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য উৎসর্গ করেন এবং সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান যাতে দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সব জনগণকে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় পূর্ণ প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 13 =

Back to top button