আন্তর্জাতিক

দেওবন্দ নিয়ে বিজেপি মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যে ভারতে তোলপাড়

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দকে নিয়ে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পশুপালন ও মৎসবিষয়ক মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বুধবার এক জনসভায় বিশ্বখ্যাত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দকে সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর বলে অভিহিত করেন। বিতর্কিত এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের মুসলিম ও রাজনৈতিক নেতারা।

উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ শহরে বুধবার একটি সভায় গিরিরাজ সিং বলেন, এই দেওবন্দ সন্ত্রাসবাদের গঙ্গোত্রী (উৎসস্থল)। সারা বিশ্বের বড় বড় সন্ত্রাসবাদ এখান থেকেই বেরিয়েছে। যেমন হাফিজ সাঈদ।

বিবিসি জানিয়েছে, বিজেপির বিতর্কপ্রবণ এ নেতা মাঝে মাঝেই এমন মন্তব্য করে থাকেন। তার নতুন এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্র থেকে বুদ্ধিজীবী অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন।

সাহারানপুর লোকসভার এমপি হাজী ফজলুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য লজ্জাজনক! এর যত নিন্দাই করা হোক তা কম হবে। দেওবন্দ হলো সেই জায়গা, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল। এখানকার আলেমরা নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করেছিলেন, কারাগারে বন্দি থেকেছেন এবং শহীদ হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী এবং অন্য বুজুর্গরা মাল্টার কারাগারে কষ্ট সহ্য করেছিলেন। অথচ এখন দেওবন্দের বুজুর্গ ও ওলামাদের ওপরে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক ছাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, দেওবন্দকে যদি সন্ত্রাসবাদী বলা হয়, আমি বলব– মোদির বন্ধু সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান; সেখানকার ইমামদের এই কথাটি গিয়ে বলুন না একবার। সেখানকার ইমামরা যা শিক্ষা দেন, দেওবন্দও সেই শিক্ষা দেয়। তা হলে সৌদির ইমামরাও সন্ত্রাসবাদী!

‘কাজেই বুকের পাটা থাকলে একবার সৌদি আরবে গিয়ে বা মক্কা শরিফে গিয়ে বলুন না এই কথাটি!’

পশ্চিমবঙ্গের এ মন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, যে প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসবাদের উৎস বলা হচ্ছে, সেখানে ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র প্রসাদ গিয়েছিলেন। কারণ দারুল উলুমের তখনকার প্রধান শাইখুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে একই কারাগারে বন্দি ছিলেন।

গান্ধী থেকে শুরু করে সুভাষ চন্দ্র বসু– সবার সঙ্গেই দেওবন্দের সখ্য সুবিদিত।

কংগ্রেস নেতা মিম আফজল বলেছেন, গিরিরাজ গঙ্গোত্রীর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের তুলনা করেছেন। গঙ্গা এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। ফলে ওই মন্তব্য করে তিনি অন্যায় করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অবিলম্বে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কলকাতায় শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের মতে, গঙ্গোত্রী শব্দটা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে এখানে এবং তা সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে, সারা দেশের মানুষের কাছে মুসলমানদের শত্রু প্রতিপন্ন করে তোলার জন্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 5 =

Back to top button