Lead Newsকরোনাভাইরাসস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

দেশেই তৈরি হলো করোনার নমুনা সংগ্রহের ভিটিএম কিট

দেশেই তৈরি করা হয়েছে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটিএম বা ভাইরাস ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া কিট। আর এ কিট তৈরি করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বিসিএসআইআর-এর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’ (ডিআরআইসিএম)।

ডিআরআইসিএমের পরিচালক ড. মালা খান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের কাছ থেকে কিট নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (২৬ মে) ডিআরআইসিএম পরিচালক ড. মালা খান স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার কাছে তাদের তৈরি পাঁচ হাজার ভিটিএম কিট উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। ডিআরআইসিএম ‘রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞান’ বা ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

ড. মালা খান বলেন, গত ১৭ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এই কিট দিয়ে তারা পরীক্ষা করে আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছে। তাই এই কিট নমুনা সংগ্রহে তারা ব্যবহার করতে চায়।

কিট সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা  বলেন, ‘আমরা কিট হাতে পেয়েছি’।

গবেষণা দলের প্রধান ড. মালা খান আরও জানান, প্রোটিন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের সল্যুশন বা দ্রবণ, যার মাধ্যমে ভাইরাস সংগ্রহ, ট্রান্সপোর্ট এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। আর এটি তৈরি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী।

তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠিত টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে আনতে গিয়ে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে আর পরীক্ষাটা যথেষ্ট এক্সপেনসিভ। আর কেবল আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই এই কিটের এখন চাহিদা রয়েছে, আর সে হিসেবে সাপ্লাই না হলে যা হয়, তার মূল্য বেড়ে যায়।

সেখান থেকেই মূলত কিট তৈরির ভাবনা জানিয়ে তিনি বলেন, গত দুই মাস আগে থেকে কিট তৈরির কাজ শুরু হয়। পিসিআর টেস্ট চাইলেও জনবল সংকট, নমুনা সংগ্রহ ঠিকমতো না হওয়া, সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম না হওয়া অথবা ট্রান্সপোর্টেশনের সময় যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই বিফলে যাবে। আর যেহেতু সে সময় সব বর্ডার বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম আমরা কেন ট্রাই করছি না।

এরপর কিট তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে গত ৪ মে চিঠি দেওয়া হয় নমুনাসহ। তারা সব ধরনের পরীক্ষা শেষে গত ১৫ মে আমাদের জানায়, এর কার্যকারিতায় তারা সন্তুষ্ট, ব্যবহার করা যেতে পারে এবং তারা ব্যবহার করবে। এরপরই তাদের পাঁচ হাজার কিট উপহার হিসেবে দেওয়া হলো।

তিনি আরও বলেন, কেবল প্রোডাকশন কস্ট যদি দেওয়া হয় তাহলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার কিট তৈরি করে দেওয়া যাবে। প্রতিটি কিটের দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর অবস্থা আরও একটু স্বাভাবিক হলে খরচ আরও কমে আসবে বলে জানান তিনি।

আমাদের ভিটিএম কিটে সংগৃহীত নমুনা ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। তাই সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে স্যাম্পল বাতিল হওয়া বা বাতিলের কারণে একই নমুনা একাধিকবার সংগ্রহ ও টেস্ট করার দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি এড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান ড. মালা খান।

‘দায়িত্বরত টেকনিশিয়ান অথবা ল্যাবরেটরিতে কার্যরত গবেষকদের হ্যান্ডলিং করার সময় কোনোভাবেই যেন ক্রস-কন্টামিনেশন না হয়, সে বিষয় বিবেচনা করেই সল্যুশন রাখার টিউব নির্বাচন করা হয়েছে। টিউবটি হালকা, সহজে এক হাতে ধরা যায় এবং এতে রাবার স্টপার্স-সংবলিত মুখ থাকায় চুইয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনাও নাই’, যোগ করেন তিনি।

 

ড. মালা খান বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন ও বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করছেন।

তিনি আরও বলেন, কিট তৈরির পাশাপাশি, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই যেহেতু কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, তাই আমরা প্রতিরোধের দিকে জোর দিয়েছিলাম। তার অংশ হিসেবেই হ্যান্ড রাব, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু হয়। সে হিসেবে গত ১৯ মার্চ থেকে গতকাল (২৬ মে) পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটে নিয়মিত প্রতিদিন হ্যান্ড রাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রায় ১০ থেকে ১৫ লিটার করে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান ড. মালা খান।

সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 3 =

Back to top button