Lead Newsজাতীয়

দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম উদ্বোধন (ভিডিও)

চট্টগ্রামে উদ্বোধন করা হয়েছে দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম। পাইলটভিত্তিতে দেশের প্রথম এই হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে আনোয়ারা উপজেলার ভরাশঙ্কে। রোববার সকালে দেশের প্রথম এই ড্যাম নির্মাণ উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি।

হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম প্রকৃতপক্ষে একটি নমনীয় ড্যাম (Flexible Dam) যার মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ি প্যানেল উঠিয়ে/নামিয়ে ৫/৬ মিনিটের মধ্যে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া বর্ষাকালে ড্যামের প্যানেলসমূহ নদী/খালের তলদেশে শুইয়ে দেয়া হয়, ফলে পানির প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয় না।

হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম হলো চীনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এক্ষেত্রে ষ্টীল প্যানেল দ্বারা ড্যাম নির্মিত হয় এবং প্যানেলসমূহ হাইড্রোলিক শক্তির সাহায্যে উঠানামা করানো হয়। ড্যামের প্যানেলসমূহ উঠিয়ে (Lifting করে) পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ/বন্যা নিয়ন্ত্রণ/লবণ পানির অনুপ্রবেশ রোধ করা যায়।

ড্যামের উদ্বোধন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। ভূ-উপরিস্থ পানি ধরে রেখে কিভাবে সেচ কাজে বা ফসল আবাদে ব্যবহার করা যায় – সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সেজন্য পাইলটভিত্তিতে দেশের প্রথম এই হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।

বোরো ধান চাষসহ সেচ কাজে ব্যবহারের ফলে দেশে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সেজন্য ভূ-উপরিস্থ পানি ধরে রেখে সেচ কাজে ব্যবহার জন্য সারা দেশে এরকম আরও হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে এ ড্যামের উদ্বোধন করা হয় রোববার সকালে।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে একসময় ধান উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো পানি বা সেচ কাজে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কৃষিবান্ধব সরকারের উদ্যোগ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সেচে ভর্তুকি দেয়ায় সেচের খরচ কমেছে। এখন সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কৃষি শ্রমিকের পিছনে। ফলে, ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার সেজন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ৫০-৭০ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ, কৃষির কোন বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৫ বছর পূর্বেই কৃষক বাঁচাও আন্দোলন করেছিলেন। আজ তাঁর নেতৃত্বেই কৃষিবিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির হার অনেক ভালো এবং এই ভালো প্রবৃদ্ধির হারে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষির।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর তত্ত্বাবধানে “কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প” এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাশঙ্খ খালে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্ণকি পদ্ধতিতে ড্যামের নির্মাণ কাজ করেন চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আইডব্লিউএইচআর কর্পোরেশন। নির্মিত ড্যামটি ৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং এতে ৫টি হাইড্রোলিক জ্যাক সংযুক্ত প্যানেল রয়েছে।

ড্যামটি নির্মাণের ফলে আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলদর, বটতলী, চাতুরী ও আনোয়ারা ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ হয়েছে যেখানে উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ মে.টন এবং এর বাজার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে মাসে) জোয়ারের সাথে আগত লোনা পানির প্রভাব থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ফসল ও গাছপালা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং আনোয়ারা উপজেলায় কৃষি উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যামের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ি প্যানেল উঠিয়ে/নামিয়ে ৫/৬ মিনিটের মধ্যে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় না। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৬৭ টি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। রাবার ড্যামের তুলনায় হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি সহজ। এতে অতি অল্প সময়ে পানি আটকানো এবং ছেড়ে দেয়া যায়। প্রয়োজনে আংশিকভাবে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব।

ইতোপূর্বে নির্মিত রাবার ড্যামসমূহ সাধারণত সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির এই প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম দ্বারা উজান থেকে (শিকলবাহা খাল হতে) আগত মিঠা পানি সংরক্ষণ ও ভাটিতে সাগর থেকে (শঙ্খ নদী হয়ে) আগত লোনাপানির অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিএডিসির চেয়ারম্যান মো: সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) মো: আরিফ, রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌ. ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিএডিসির প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকসহ বিএডিসির অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জনপ্রতিনিধিগণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 4 =

Back to top button