Lead Newsজাতীয়

দেশের প্রায় ৫ শতাংশ দরিদ্র দিনে একবেলার বেশি খাদ্য জোগাড় করতে পারেননি

করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি ঠেকাতে লকডাউনের সময় দেশের প্রায় ৫ শতাংশ দরিদ্র দিনে একবেলার বেশি খাদ্য জোগাড় করতে পারেননি।

অর্থাৎ তারা দুই বেলা অভুক্ত থেকেছেন। দরিদ্র মানুষের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব: দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে খাদ্য অধিকার আন্দোলন।

গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ৩৭টি জেলায় প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এই জরিপ ৮৩৪ জনের ওপর পরিচালনা করা হয়। দরিদ্র মানুষ হিসেবে রিকশাচালক, হকার, দিনমজুর, ক্ষুদ্র দোকানি, কৃষি শ্রমিক এবং গৃহকর্মীরা জরিপে অংশ নেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ২৮ লাখ। সেই হিসাবে পাঁচ শতাংশ দরিদ্র দুই বেলা অভুক্ত থাকলে গোটা দেশে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ লাখেরও বেশি।

জরিপের তথ্যানুযায়ী করোনার প্রভাবে দেশের ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে। ফলে খাদ্য সংকটে ছিল তারা। অন্তত ৮৭ শতাংশ দরিদ্রের পক্ষে তিনবেলা খাদ্য জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রাম এবং শহর প্রায় সমান হারে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে বেলা ১১টায় জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে।

জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. নাজনীন আহমেদ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ জরিপ প্রক্রিয়া তদারক করেছেন।

জরিপে দেখা যায়, দরিদ্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে ৭০ শতাংশ আয় কমেছে সিলেট বিভাগে। সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ খাদ্য সংকটের কথা বলেছেন চট্টগ্রামের দরিদ্র মানুষ। করোনায় দোকান বন্ধ ছিল বরিশালে সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ। একই বিভাগের দরিদ্ররাই বেশি ২৫ শতাংশ হারে কাজ হারিয়েছেন দেশের অন্য বিভাগের তুলনায়।

জরিপে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে যেসব দরিদ্র মানুষ তিনবেলা খেতে পারতো, জরিপকালীন তাদের মধ্যে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে পেরেছেন। এমনকি ৫ শতাংশ দরিদ্রকে দিনে একবেলা খেতে হয়েছে। যারা লকডাউনের মধ্যেও তিনবেলা আহার জোগাড় করতে পেরেছেন তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ শতাংশই গড়ে তাদের এই কষ্টের কথা বলেছেন। ৮০ শতাংশ বলেছেন তারা সপ্তাহে দুই দিনের বেশি পুষ্টিকর খাবার শিশুদের দিতে পারেননি।

খাদ্য জোগানের দিক থেকেও সবচেয়ে বেশি সংকট ঢাকা বিভাগের দরিদ্রদের। এদের প্রায় ৭০ শতাংশই খাদ্য জোগাড় করতে সমস্যায় পড়েছেন। ঢাকার পরই রংপুর বিভাগের অবস্থান। রংপুরের ৬৮ শতাংশ দরিদ্রকে এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। খাদ্য জোগানের অন্যান্য অসুবিধার মধ্যে রয়েছে খাদের পুষ্টিকর খাবারের সংকট, খাদ্য গ্রহণে ধার করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি। অর্থ ধার করে খাদ্য জোগাড় করতে হয়েছে এমন দরিদ্রদের হার ময়মনসিংহে বেশি। এই বিভাগের ৩২ শতাংশ দরিদ্রকেই খাদ্য জোগানে অর্থ ধার করতে হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − five =

Back to top button