করোনাভাইরাসজাতীয়

নতুন বন্দিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করুনঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একাধিক নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তন্মন্ধে নতুন বন্দিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করা অন্যতম। বুধবার (৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই নির্দেশনা কারা অধিদফতরে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (৭ মে) কারা অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় বলা হয়, কারাগারের অবস্থা অনুযায়ী প্রত্যেক ইউনিটের জন্য মহামারি প্রতিরোধক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন—মাস্ক, গ্লাভস, জীবাণুনাশক সরবরাহ, প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং অপরাধীদের মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

কারারক্ষী (পুলিশ), কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অপরাধীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ প্রতিনিধির (স্বাস্থ্যকর্মী) ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা যাবে, যেমন—জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি, তাদের অবশ্যই স্ক্রিনিং করতে হবে। কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর করোনামুক্ত বা সুস্থতা নিশ্চিত হলে হেফাজতে নেওয়া যাবে।

মহামারির সময় মুখোমুখি সাক্ষাৎ বন্ধ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং প্রশাসনিক ভবনে দৈনিক ২-৩ বারের জন্য ২০-৩০ মিনিট করে অবাধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যদি এসি ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে এসির স্বাভাবিক মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ বাতাস চলাচল বৃদ্ধি এবং ফিরতি বাতাস প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।

আবাসন, কাজের এলাকা, ক্যান্টিন, গোসলখানা, গণশৌচাগার, জনসমাগম এলাকার মেঝে এবং বারবার ধরতে হয় এমন জিনিসপত্র, যেমন—দরজা এবং সিঁড়ির হাতল বারবার, থালাবাসন ও গ্লাস প্রতিবার ব্যবহারের পর জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

খাবার গ্রহণ করার সময় দূরে দূরে অবস্থান করতে হবে এবং নিজস্ব থালাবাসন ব্যবহার করতে হবে। ক্যান্টিন ও গণশৌচাগারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং পর্যাপ্ত সাবানের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিদিন ময়লা এবং ময়লা সংগ্রহ করার স্থান জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। নিষ্কাশন নল, বেসিন ও ঝরনা ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে, যাতে এগুলোর কার্যকারিতা অব্যাহত থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে বিনোদন এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে একে অপরের মাঝে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখতে এবং দেখা-সাক্ষাৎ হ্রাস করতে হবে।

জমায়েত এবং দলগত কাজ বন্ধ রাখতে হবে। কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর রাখতে হবে। হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক টিস্যু অথবা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য পরামর্শগুলো এমনভাবে রাখতে হবে, যেন সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। কোভিড-১৯ কীভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

একটা জরুরি অঞ্চল গঠন করতে হবে। যখন কারারক্ষী, কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কোনও অপরাধীর কোভিড-১৯ সম্পর্কিত উপসর্গ দেখা দেবে (যেমন জ্বর) তখন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ওই পৃথক স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সময় মতো চিকিৎসা দিতে হবে।

কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলে এসি ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা গাইডলাইন অনুসরণ করে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

এছাড়া, মানুষের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ডাইনিং (খাবার) পরিষেবা বন্ধ রাখতে হবে। কারারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা অপরাধী, যিনি কোনও মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ফিরে এসেছেন—যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোভিড-১৯-এর জন্য পরীক্ষা দ্বারা সুস্থ বলে বিবেচিত হবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।

কারাগারে কেউ কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে কারারক্ষীসহ সব অপরাধীর মধ্যে কারও কোভিড-১৯-এর উপসর্গ আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, সেখানকার সব অপরাধী ও রোগীর জন্য আলাদা অঞ্চল, কোয়ারেন্টিন পর্যবেক্ষণ অঞ্চল এবং একটি সাধারণ অঞ্চল তৈরি করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার অধীনে একটি সংরক্ষিত দল নিযুক্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করোনোর জন্য বায়ু চলাচল ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যেখানে রোগী শনাক্ত হয়েছে, সে স্থান জীবাণুমুক্ত করা এবং কারাগার পরিপূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিশেষ লোকবল নিয়োগ করতে হবে।

যদি কারাগারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়, তাহলে শনাক্ত রোগী এবং যাদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ আছে, তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কারাগারে কোয়ারেন্টিন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মুমূর্ষু রোগীদের যথাসময়ে স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। যাদের মধ্যে উপসর্গ লক্ষণীয়, তাদের স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর এবং কড়া নজরদারি ও পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, ‘কারাগারে যেন করোনাভাইরাস ঢুকতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। অদ্যাবধি কারাগারে থাকা কোনও বন্দির মাঝে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =

Back to top button