নতুন সংক্রমণ বেড়ে চলা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নবম অবস্থানে!
দেশে নতুন করে দুই হাজার ৮০০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বৃহস্পতিবার। এর ফলে বিশ্বের যে সকল দেশে এখন নতুন করে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে, সেসব দেশের তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত এক তথ্যসারণীতে বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে সংক্রমণের তারতম্যের ভিত্তিতে মহামারি মহামারির কবলে পড়া দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
প্রথম শ্রেণিতে রাখা হয়েছে নতুন সংক্রমণ হার বাড়ছে- এমন দেশগুলোকে। দ্বিতীয় স্তরে আছে- সংক্রমণের হার অপরিবর্তিত থাকা দেশ। এবং সর্বশেষে রাখা হয় সংক্রমণ কমছে এমন দেশগুলোকে। আলোচিত তিন শ্রেণিতে থাকা দেশের সংখ্যা যথাক্রমে; ৭৫, ৫২ এবং ৪১টি।
এর মধ্যে ৬০ হাজার ৩৯১টি সক্রিয় সংক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ক্যাটাগরির দেশের তালিকায় স্থান করে নেয়। নতুন সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশকে নবম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেশী ভারত এদিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ছে। অবশ্য গড় হিসাব বাদ দিলে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয় গত ৪ জুন, এদিন ভারতে মোট ৫ হাজার ৩২ জন- কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে; পাকিস্তান আছে প্রথম শ্রেণির ৭ নাম্বারে, আফগানিস্তান ১৮তম, নেপাল ৪০তম, মালদ্বীপ ৪৭তম এবং শ্রীলংকা ৪৮তম স্থানে। এসব কয়টি দেশেই করোনার নতুন সংক্রমণ বিস্তার লাভ করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভূটান রয়েছে প্রথম তালিকার বাইরে। দেশটিতে সংক্রমণ সংখ্যা মার ৪৮টি।
প্রথম শ্রেণীতে বা সংক্রমণ নতুন করে বিস্তারে বিশ্বের মাঝে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। প্রতিনিয়তই অবনতি দিকে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির পরিস্থিতি । গত বৃহস্পতিবার নাগাদ দেশটিতে মোট সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল সোয়া ৬ লাখ।
অন্যদিকে, ব্যাপক মাত্রায় করোনা মহামারির কবলে পড়া যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং স্পেনে নতুন সংক্রমণের হার বাড়েনি। ফলে তারা সংক্রমণ হার অপরিবর্তিত দেশের শ্রেণিতে অবস্থান করছে।
অন্যদিকে সংক্রমণ হার কমছে এমন দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং জার্মানি।
গত বৃহস্পতিবার দেশে ২৮২৮টি নতুন সংক্রমণের কথা জানানো হয়। সবচেয়ে বেশি দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয় ২ জুন, এদিন ২৯১১ জন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়।
দেশে নতুন করে সংক্রমণের হার যখন বাড়ছে, তা মধ্যেই রোগীদের সেরে ওঠার হার অপরিবর্তিত রয়েছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। সক্রিয় কেসের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে যা অন্যতম প্রধান কারণ। আর নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রতিনিয়তই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে সেরে ওঠাদের হার প্রতি পাঁচজনে একজন।
বাংলাদেশে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হার এখন ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সক্রিয় কেসের ক্ষেত্রে এটা ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
গতকাল ৫ জুন নাগাদ দেশে মোট ৬০ হাজার ৩৯১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউড-আইইডিসিআর সূত্রে। একইসময় মোট তিন লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫টি করোনা টেস্ট করা হয়েছে বলেও দাবি করে সংস্থাটি।
আক্রান্ত রোগীর সেরে ওঠার হার ২১ দশমিক ২ শতাংশ, একমাস আগে যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সেই তুলনায় শীর্ষে থাকা দেশ ব্রাজিলে সুস্থতা লাভের হার ৪৪ দশমিক ৭ এবং ভারতের ক্ষেত্রে এটা ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বর্তমান সংক্রমণ হার অব্যাহত থাকলে চলতি জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে মোট এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হবেন। আর জুলাই শেষে যা উন্নীত হতে পারে ২ লাখ ১৮ হাজারে। দেশে করা দৈনিক করোনা টেস্টের ভিত্তিতে সংক্রমণ শনাক্তের এই হার অনুমান করা যায়।
করোনাভাইরাসের সক্রিয় সংক্রমণের হারে এখন পুরো বিশ্বের মাঝে ২০তম অবস্থানে বাংলাদেশ। মে মাসের ১৭ তারিখ নাগাদ ২২ হাজার ২৬৮টি সংক্রমণ নিয়ে এই অবস্থান ছিল ৩০তম স্থানে। এরপর মাত্র ২০ দিনেই ১০ ধাপ সামনে চলে আসে বাংলাদেশ।