নথি ফাঁস, গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের সহযোগী গুগল-মাইক্রোসফট
নথি ফাঁস, গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের সহযোগী গুগল-মাইক্রোসফট
গাজার নৃশংস যুদ্ধে শুরু থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীকে হামলায় সাহায্য করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র –একথা সবার জানা। কেননা ইসরায়েলিদের রক্ষার নাম করে বরাবরই অস্ত্র-অর্থ —সবকিছু দিয়ে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাই বলে যুদ্ধে সহযোগীর ভুমিকায় টেক জায়ান্ট? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন- এবার ইসরায়েলের সহযোগী হিসেবে সামনে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই টেক জায়ান্ট – গুগল ও মাইক্রোসফটের নাম।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংস এ হামলায় ইসরায়েলকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে মার্কিন কোম্পানি মাইক্রোসফট ও গুগল। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গুগল সরাসরি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছে। আর মাইক্রোসফটের ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
ঐ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক সপ্তাহ থেকেই গুগলের কর্মীরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে তাঁদের সর্বাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই প্রযুক্তির সুবিধা দিতে শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- গুগল এমন একসময়ে এই কাজটি করেছে, যখন তারা নিজেকে ইসরায়েলের সামরিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছিল। এর আগে, ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি নিয়ে নিজ কর্মীদের প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছিল গুগল।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে গুগল ৫০ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এই কর্মীদের দাবি ছিল, নিমবাস চুক্তির মাধ্যমে সরবরাহ করা প্রযুক্তি ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি করার জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে। এর আগে ২০২১ সালে, গুগল ও আমাজনের কর্মীরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে নিমবাস প্রকল্প চুক্তির নিন্দা জানিয়েছিলেন।
এদিকে নামকরা ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা যাচ্ছে, গাজায় যখন হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়, তখন মাইক্রোসফটের ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। ঐ খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় হামলা শুরু করে তখন থেকে তারা মাইক্রোসফটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করে। ঐ হামলায় কারিগরি সুবিধা দেওয়ার জন্য মাইক্রোসফটের সঙ্গে ১ কোটি ডলার চুক্তিও করেছিল ইহুদিবাদি রাষ্ট্রটি।
গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী আইডিএফের কারিগরি সংকট দেখা দেয়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে- তাদের কাছে যে পরিমাণ তথ্য ছিল, সেই সব তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের জন্য মাইক্রোসফট, গুগল ও আরেক টেক জায়ান্ট আমাজনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। আইডিএফের প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা ছাড়া সম্মুখসমর ও গোয়েন্দা তৎপরতায় সাহায্য করেছে মাইক্রোসফট। তবে এ নিয়ে মাইক্রোসফট, আইডিএফ কিংবা ইসরায়েলি বাহিনী—কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে জানা গেছে- চুক্তির অংশ হিসাবে সংস্থাগুলো ইসরায়েলে ডেটা সেন্টার তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন সরকারি বিভাগে ক্লাউড সফ্টওয়্যার এবং স্টোরেজ পরিষেবা সরবরাহ করতে থাকে। ওয়াশিংটন পোস্টের মতে- ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কয়েকবছর ধরে নজরদারি এবং সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু সনাক্তকরণের দিকে মনোনিবেশ করে নিজেদের এআই সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিএফ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গতবছর একই পত্রিকা জানিয়েছিল- ক্লাউড প্রযুক্তি ও অন্যান্য কম্পিউটিং ব্যবস্থায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।