Breakingধর্ম ও জীবন

নামাজে যে কারণে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইতেন বিশ্বনবি

নামাজের শেষ বৈঠকে আল্লাহর কাছে বেশ কিছু বিষয়ে আশ্রয় চাইতেন স্বয়ং বিশ্বনবি। পড়তেন বিশেষ কিছু দোয়া। আবার বেশি বেশি ঋণগ্রস্ততা থেকেও আশ্রয় চাইতেন। ঋণগ্রস্ততা থেকে বেশি আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া যেমন শিখিয়েছেন তেমনি এর কারণও তিনি জানিয়েছেন। কী সেই দোয়া ও কারণ?

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ বেগোনাহ নিষ্পাপ ছিলেন। আল্লাহ তাঁর আগের এবং পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন মর্মে কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। তারপরও তিনি আল্লাহর কাছে ছোট-বড়, সাধারণ-জটিল সব বিষয়ে আশ্রয় চাইতেন। এর অন্যতম কারণ হলো- উম্মতে মুহাম্মাদিকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া।

অতঃপর মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দায় পরিণত হওয়া মুমিন মুসলমানের একান্ত কামনা ও কাজ। এ ছাড়া আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার কোনো উপায় নেই। কেননা তিনি নিজেই এ প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন রেখে জানিয়েছিলেন- ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনকারী বান্দায় পরিণত হবো না?

নামাজে ঋণগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কারণ
কত বড় জঘন্য অপরাধ। ঋণগ্রস্ততার কারণে মানুষ দুইটি মারাত্মক গোনাহ করে ফেলে। ঋণ পরিশোধে বেশি বেশি মিথ্যা কথা বলে এবং ওয়াদা খেলাফ করে।

তা থেকে মুক্ত থাকতে হাদিসে দোয়া এবং কারণটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামাজে এই দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাঝ্ঝালি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি; আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরামি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবর আজাব থেকে পানাহ চাই, তোমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে পানাহ চাই এবং তোমার কাছে জীবন-মৃত্যুর ফেতনা থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পাপকার্য ও ঋণগ্রস্ততা থেকেও পানাহ চাই।’

(ঋণগ্রস্ততা থেকে মুক্তিতে হাদিসের নির্দেশনা)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বর্ণনা করেন, এক ব্যাক্তি তাঁকে (বিশ্বনবিকে) বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি ঋণগ্রস্ততা থেকে এত বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন কেন?
তিনি বললেন, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয়, তখন (দুইটি কাজে বেশি জড়িয়ে পড়ে)-
১. মিথ্যা কথা বলে এবং
২. ওয়াদা করার পরও ওয়াদা খেলাফ বা ভঙ্গ করে।’ (মুসলিম)

হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঋণগ্রস্ততার মাধ্যমে মিথ্যা ও ওয়াদা খেলাপ থেকে হেফাজত করতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি ঋণগ্রস্ততা থেকে মুক্তির দোয়া করতেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঋণগ্রস্ত হলেই তা পরিশোধের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। ঋণগ্রস্ততার মাধ্যমে নিজেকে মিথ্যা বলা ও ওয়াদা খেলাফ করার গোনাহ থেকে হেফাজত করা জরুরি। এ দুটি কাজই মুনাফিকের আলামত। আর মুনাফিকের অবস্থান জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মিথ্যা ও ওয়াদা খেলাফের গোনাহ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে যথা সময়ে ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − eight =

Back to top button