Breakingধর্ম ও জীবন

নারীরা মুখ খোলা রেখে দাওয়াতি কাজ করতে পারবে কি?

নারীরা মুখ খোলা রেখে চ্যানেলে কিংবা যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দ্বীনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, দাওয়াতি কাজ কিংবা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে সম্প্রতি ফতোয়া দিয়েছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ। তাদের কাছে প্রশ্ন এসেছিল-

‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, নিকাব ছাড়া চেহারা খোলা রেখে কোনো নারী শিক্ষক কি ইউটিউব বা অন্য কোনও চ্যানেলে দীনের দাওয়াত দিতে পারবেন?

এ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে এর বিস্তারিত উত্তর জানতে এক ব্যক্তি দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগে আবেদন করেন। এ প্রশ্নের জবাবে দারুল উলুম দেওবন্দ জানায়-

‘না’, কোনো নারী নিজের চেহারা খোলা রেখে ইউটিউবে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারবে না। এটা জায়েজ নেই।’

দেওবন্দের ফতোয়া

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ইসলামি শরিয়তে নারীদের জন্য অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে পর্দা করা বাধ্যতামূলক এবং পর্দাতে চেহারা বা মুখও অন্তর্ভুক্ত। ফেতনা সৃষ্টির আশঙ্কার কারণেই পর্দার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কারণ নারীদের খোলা চেহারা তাদের সৌন্দর্যের সমাগম।

বর্তমান সময়ে খারাপ কাজের আধিক্য ও ব্যভিচারের ঘটনাগুলোয় নারীদের ফেতনা সৃষ্টির ভয়কে আরও তীব্রতর করে তুলেছে।

আর ইউটিউব কিংবা অন্য চ্যানেলগুলো বিশ্বের যে কোনও জায়গায় একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। সে কারণে সবাই এসব চ্যানেলের আয়োজনগুলো দেখতে পায়।

সুতরাং কোনো নারী শিক্ষক বা একজন মুসলিম নারীর পক্ষে ধর্মীয় আমন্ত্রণের নামে বা কোনও কাজের জন্য মুখ বা চেহারা খোলা নিয়ে ইউটিউব চ্যানেলে আসা ঠিক নয়। এটা জায়েজ নেই। এছাড়াও, ইউটিউবে ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি দেয়াও পাপ।

দেওবন্দের ওলামাদের গবেষণা

কারণ দেওবন্দের আলেম-ওলামাদের গবেষণা হলো- ‘ডিজিটাল চিত্রগুলো সাধারণ চিত্রগুলোর মতোই অবৈধ। যথার: জীবিতদের ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফিও ডিজিটাল ফটোগ্রাফি এবং অ-ডিজিটাল ফটোগ্রাফির মতো। উভয়টিই গোনাহের অন্তর্ভুক্ত এবং উভয়টিই অবৈধ।’

নারীদের প্রতি কুরআনের নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৯)

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, একজন নারীর জন্য পর্দা করা নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি প্রমাণিত সত্য যে, একজন যুবতী নারীর পর্দার জন্য তার চেহারা অপরিচিত মানুষের নজরের বাইরে থাকবে।’ (আহকামুল কুরআন লিল জুস্সাস)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করছনে-

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

তোমরা ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে আর বর্বর যুগের অনুরূপ (নারীদের মতো) নিজেদের প্রদর্শন করবে না।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)

হজরত আলি ইবনে আবি তালহা রাদিয়াল্লাহ আনহু হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-

‘আল্লাহ তাআলা মুমিনদের স্ত্রীদের আদেশ করছেন, তারা যখন কোনো প্রয়োজনে বের হবে তখন যেনো তারা তাদের মাথার কাপড় দ্বারা চেহারা ঢেকে নেয়। শুধু একটি চোখ খোলা রাখে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে পরিপূর্ণ পর্দা করার তাওফিক দান করুন। মুখ খোলা রেখে যে কোনো চ্যানেলে যে কোনো আলোচনা করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =

Back to top button