নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের ভাবনা সরকারের
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে সরকার। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠনের লক্ষ্যেই এ ভাবনা। তবে এখন পর্যন্ত এটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে আইনের কথা সংবিধানেই বলা আছে। কিন্তু অতীতের কোনো সরকারই সে পথে হাঁটেনি। নিজেদের সুবিধার জন্য সরকারগুলো নানাভাবে এসব পদে নিয়োগ দিয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু এবার আইন করার বিষয়ে সরকারের ভাবনাকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা আইন প্রণয়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পেলেই কাজ শুরু হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। ওই সময় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা চাই পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক। সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আইন প্রণয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। তবে আইন প্রণয়নের বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটি চিন্তাভাবনার পর্যায়েই আছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান যে পদ্ধতি আছে, সেটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব দলের মত নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করে থাকেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন একটা পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করেন, তখন সেটা আইন না হলেও আইনের কাছাকাছি।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ স্বাধীনতার পর ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আমলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
২০১৭ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুধু কমিশন গঠন নয়, কমিশনের কাজের ধরন সম্পর্কেও আইনের মাধ্যমে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে আজিজ কমিশন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। সেসময়ও নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়েছিল। এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষের আগে সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া তুলে দিলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয় বড় ভূমিকায় থাকবে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কমিশন সচিবালয় যুক্ত থাকবে। এই বিষয়ে আইনের খসড়া কারা তৈরি করবে, কীভাবে সেটা চূড়ান্ত হবে-এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত বড় অগ্রগতির খবর জানা যায়নি। তবে আইন প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলে দ্রুতই আইনের খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বিএনপি কেন আইন প্রণয়ন করেনি, সেই সমালোচনা করেছিল। বর্তমান সরকার টানা একযুগের বেশি সময় ক্ষমতায় আছে। এ সময় তারা সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠনে নতুনত্ব আনলেও আইন প্রণয়ন করেনি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও আইন প্রণয়ন না করলে বর্তমান সরকারের ওপরও একই দায় বর্তাবে। সমালোচনাবিদ্ধ হবে তাদের এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার যদি আইন করার কথা ভাবে, তাহলে খুবই ভালো। কিন্তু সেই আইন যদি অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগে না হয় তবে তা কাজে আসবে না। তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি আইন করলেই কেবল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা সরকার বললেও বাস্তবে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।