Lead Newsআন্তর্জাতিক

এবার চীনের বিরুদ্ধে নেপালের জমি দখল, নদীপথ পরিবর্তনের অভিযোগ

চীনের বিরুদ্ধে এবার জমি দখলের অভিযোগ তুলল নেপাল সরকার। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্ভে দফতরের একটি রিপোর্টে এই কথা বলা হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থার খবর।

সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের উত্তরে তিব্বত সীমান্তে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে চীন। আর সেই কাজ করতে গিয়ে অন্তত ১১টি স্থানে সীমান্ত লঙ্ঘন করে নেপালের জমি দখল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি জায়গায় ৩৩ হেক্টর (৮১.৫৪ একর) জমি ইতিমধ্যেই নেপালের হাতছাড়া হয়েছে। পাশাপাশি, নেপালের ভূখণ্ডের পাহাড়ি নদীগুলোর গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়ে তিব্বতে পানির যোগানের ব্যবস্থাও পাকা করছে চীন! যদিও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা দখলদারি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

চলতি মাসেই নয়াদিল্লির আপত্তি উড়িয়ে কালাপানি, লিপুলেখ গিরিপথ ও লিম্পিয়াধুরা এলাকায় প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ডজুড়ে তৈরি নয়া মানচিত্রে অনুমোদন দিয়েছে নেপাল পার্লামেন্ট। সে সময় নেপালের বর্তমান সরকারের সঙ্গে বেজিংয়ের ‘ঘনিষ্ঠতার’ প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল আলোচনায়। এমনকি, দীর্ঘ দিনের বন্ধু নয়াদিল্লির প্রতি নেপালের এমন আচরণের নেপথ্যে চীনের প্ররোচনা আছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এবার নেপালের একটি সরকারি রিপোর্টে চীনা ‘দখলদারি’র উল্লেখ সেই বিতর্কে নতুন মোড় এনে দিল।

নেপাল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্ভে দফতরের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নেপাল-তিব্বত সীমান্তের পশ্চিমে হুমলা জেলায় ১০ হেক্টর এবং মধ্য অংশের রাসুওয়া জেলায় ৬ হেক্টর জমি ইতিমধ্যেই দখল করে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চীন। পাশাপাশি, বাগডারে খোলা এবং কার্নালি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। সেগুলোর গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে চীন অধিকৃত তিব্বতের দিকে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে নেপালের বেশ কিছু কৃষি ক্ষেত্রে জল সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই ভাবে তিব্বত থেকে নেপালের দিকে প্রবাহিত সুমজং, কামখোলা এবং অরুণ নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ায় মধ্য নেপালের সঙ্খুয়াসভা জেলার জলের অভাব দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই জেলায় ইতিমধ্যেই নেপালের ৯ হেক্টর জমি বেজিংয়ের গ্রাসে চলে গেছে।

নেপাল কৃষিমন্ত্রণালয়ের সার্ভে দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এভাবে নদীর গতিপথ বদলে জমি দখলের প্রক্রিয়া জারি থাকলে অচিরেই আমাদের কয়েকশো হেক্টর জমি তিব্বতের হয়ে যাবে।’

এর আগে নেপালের সিন্ধুপালচক জেলার সীমান্তবর্তী ১১ হেক্টর জমি ‘তিব্বতের অংশ’ হিসেবে দাবি করেছে চীন। চীনা আগ্রাসনের আশঙ্কায় সেখানকার নেপালি গ্রামবাসীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। ঠিক এই অংশেই খারানে খোলা এবং ভোটে কোসি নদীর গতিপথ আলাদা হয়েছে। নেপালের আশঙ্কা, হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট ওই দুই নদীর গতিপথও ভবিষ্যতে তিব্বতের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করবে চীনা ইঞ্জিনিয়াররা।

মে মাসে চীনের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টুইটারে পুরো মাউন্ট এভারেস্টকে ‘চীনের অংশ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বাধায় টুইটটি মুছে দেয়া হয়।

সার্ভে রিপোর্টে আশঙ্কা, পাকাপাকি ভাবে ওই এলাকাগুলো দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে চীনা সশস্ত্র পুলিশের চৌকি বসানো হতে পারে। ষাটের দশকে নেপাল সরকার জমি সমীক্ষার পরে চীন সীমান্ত চিহ্নিত করতে ১০০টির বেশি পিলার বসিয়েছিল। ভারত সীমান্তে বসানো হয়েছিল ৮,৫৫৩টি পিলার। চীন ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পিলার সরিয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + 3 =

Back to top button